প্রতীকী ছবি।
আঠারো ঘণ্টা আগেই মারা গিয়েছেন তিনি। তবুও ‘বেঁচে আছে’ সন্দেহে সেই দেহ নিয়ে বুধবার দুপুরে দু’ঘণ্টা ধরে টানাপড়েন চলল শ্মশান ও হাসপাতালে।
রঘুনাথগঞ্জ শ্মশান থেকে দেহ নিয়ে পরিজনেরা সটান হাজির হন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকও দেহ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের। তবু সেই বৃদ্ধের সঙ্গে আসা শ’খানেক লোকের বিশ্বাসে আঘাত করে ক্ষোভের মুখে পড়তে চাননি তিনি। তাঁদের দাবি মেনে, তড়িঘড়ি মৃতদেহের নাকে লাগানো হয় অক্সিজেন মাস্ক। কিছুক্ষণ পরে সঙ্গের লোকজনও বুঝে গিয়েছেন, আর কোনও আশা নেই। হাসপাতাল কর্মীরা মাস্ক খুলে নিতেই দেহ নিয়ে তাঁরা ফের রওনা দেন শ্মশানের উদ্দেশে। টানা তিন ঘণ্টা ধরে এমন ঘটনা দেখতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভেঙে পড়েছে ভিড়।
যাঁর দেহ নিয়ে এত টানাপড়েন সেই রাধেশ্যাম ভাস্কর (৬৩) ছিলেন সাগরদিঘির ব্রাহ্মণীগ্রামের বাসিন্দা। এক সময় সাগরদিঘি থানায় এনভিএফ কর্মী ছিলেন। অবসরের পরে শুরু করেন কাঠের ব্যবসা। বেশ কিছু দিন থেকে অসুস্থ ছিলেন তিনি। বুধবার তাঁর বহরমপুরে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সাগরদিঘি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখানেই রাত ৮টা ৫০ নাগাদ ভর্তি করার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর।
চিকিৎসক যথারীতি তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রও লিখে দেন। মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন পরিবারের লোকেরা। রাধেশ্যামের ভাই সন্দীপন ভাস্কর ব্যারাকপুরে পুলিশের দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নে কর্মরত। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। তিনি জানান, বাড়িতে শোকের পরিবেশ। সকলেই কান্নাকাটি করছে। বড় ভাইপো বুধবার বাড়ি ফিরতেই দেহ নিয়ে গাড়িতে করে শ্মশানে রওনা দেন পরিজনেরা। সঙ্গে গ্রামের প্রায় শ’খানেক লোকজন।
সন্দীপন বলছেন, “বেলা আড়াইটে নাগাদ বিদ্যুতের চুল্লিতে দেহ ঢোকানো হবে। এমন সময় হঠাৎই দেখা গেল, দাদার পেটটা যেন ওঠানামা করছে। নড়ছে হাতও।” তার পরে সে এক হুলুস্থুল কাণ্ড। দেহ নিয়ে লোকজন প্রথমে হাজির হন এক নার্সিংহোমে। সব শুনে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দেহ নিয়ে যেতে বলেন পাশেই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেহ পরীক্ষা করলেন। কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই সমস্বরে শোনা গেল, ‘‘দেহে প্রাণ আছে। এখনই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করুন।” শ’খানেক লোক। তাঁদের প্রায় সকলের কোমরে গামছা বাঁধা। ততক্ষণে চিকিৎসকও বুঝে গিয়েছেন, ‘বেঁচে আছে’ এই বিশ্বাসে শ্মশান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে দেহ।
চিকিৎসক সত্য হাজরা বলছেন, “দেহে প্রাণ নেই জেনেও তাই অক্সিজেনের মাস্ক লাগানো হল নাকে। দেহ ঘিরে তখন দাঁড়িয়ে পড়েছেন তার আত্মীয় পরিজনেরা। সকলেই জানতে চাইছেন, ‘কী বুঝছেন, ডাক্তারবাবু?’ আমি তাঁদের অপেক্ষা করতে বলি।”
মিনিট চল্লিশ পরে দেহে কোনও সাড়া নেই দেখে এ বার পরিজনেরাও বুঝে যান, দেহে প্রাণ নেই। পরিস্থিতি শান্ত হতে খুলে নেওয়া হয় মাস্ক। জরুরি বিভাগ থেকে ফের দেহ উঠিয়ে নিয়ে সকলেই রওনা দেন শ্মশানের উদ্দেশে। পিছন থেকে সমস্বরে ধ্বনি উঠল ‘বল হরি, হরিবোল...’। হাঁফ ছাড়লেন চিকিৎসকও। সাগরদিঘি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে ফের মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয় রাধেশ্যামের পরিজনদের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy