Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে মিলছে না পানীয় জল

পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও হাসপাতালে পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রোগীর পরিজনদের মধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অবস্থার জন্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে (পিএইচই) দায়ি করেছেন। পিএইচই-র জবাব, স্বাস্থ্য দফতর টাকা বরাদ্দ না কারার জন্যেই এই অবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও হাসপাতালে পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রোগীর পরিজনদের মধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অবস্থার জন্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে (পিএইচই) দায়ি করেছেন। পিএইচই-র জবাব, স্বাস্থ্য দফতর টাকা বরাদ্দ না কারার জন্যেই এই অবস্থা।

প্রায় তিনশো শয্যা বিশিষ্ট মহকুমা হাসপাতালে বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ নম্বর, কান্দি-সহ পাঁচটি ব্লক এলাকা ও কান্দি পুরসভা এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসার জন্যে আসেন। বর্ধমান, বীরভূম জেলার একটি অংশের বাসিন্দারাও এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। ফলে বছরভর ভিড় থাকে রোগী ও পরিজনদের। এমন গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল চত্বরে তিনটি অগভীর নলকূপের সব ক’টি বিকল থাকায় তৈরি হয়েছে সঙ্কট।

সালার এলাকার বাসিন্দা রফিক শেখের ছেলে রবিউল জ্বর নিয়ে তিন দিন হল হাসপাতালে ভর্তি। ছেলের সঙ্গে দিন রাত এক করে হাসপাতালে রয়েছেন পেশায় চাষি রফিক। বুধবার হাসপাতালে পৌঁছে জলসঙ্কটের প্রশ্ন তুলতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন তিনি। বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, ‘‘হাসপাতালে কোথাও এতটুকু পানীয় জল নেই। কাঠফাটা রোদে ছাতিয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।’’ উপায়ন্তর না দেখে সংলগ্ন দোকান থেকে লিটারপিছু কুড়ি টাকায় জল কিনছেন অনেকেই।

রাইগ্রামের বাসিন্দা মাখন শেখ বন্ধুর বাবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। তাঁর কথায়, রাজ্যে স্বাস্থ্যের বেহাল দশার কথা জানি। কান্দি হাসপাতালও যে তার ব্যতিক্রম নয়, সেটা জানতেই পারতাম না। অনেকের আবার অভিযোগ, হাসপাতালের অন্তঃবিভাগগুলিতে পাইপ লাইনে পানীয় জল সরবরাহের কথা থাকলেও তা খাওয়ার অযোগ্য। মাঝে মধ্যেই ঘোলা জল বের হয়। একজনের আবার প্রশ্ন, জল কিনতেই যদি পয়সা শেষ হয়ে যায় ওষুধ কিনব কোথা থেকে?

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ সবের দায় পিএইচই দফতরের উপরে চাপিয়েছেন। হাসপাতালের সুপার তথা কান্দি মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, “হাসপাতালে পানীয় জলের পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে পিএইচই দফতর। তাদের বারবার সমস্যার কথা জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাসপাতালের পানীয় জলের সমস্যা রয়েছেই।’’ পিএইচই দফতরের কান্দি মহকুমা আধিকারিক প্রদ্যুৎ দাসের জবাব, সঙ্কট মেটাতে ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আমরা স্বাস্থ্য দফতরকে সে কথা জানিয়েছি। টাকা না আসা পর্যন্ত কিছুই করা যাচ্ছে না!

শুধু জলের সমস্যা নয়—হাসপাতাল চত্বরে ঢুকলেই নজর পড়বে ইতিউতি পড়়ে থাকা আবর্জনায়। সেখান থেকে আসা দুর্গন্ধ জানান দেবে হাসপাতালের সংলগ্ন অঞ্চলের চিত্র! কেন নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হয় না? সুপার ভাস্করবাবুর দাবি, হাসপাতাল কান্দি পুর এলাকার অন্তর্গত। পুরসভাকে নিয়মিত করও দেওয়া হয়। পুরসভারই জঞ্জাল সাফাইয়ের বিষয়টি পুরসভারই দেখার কথা। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ নূন্যতম পরিষেবাটুকু দেয় না! হাসপাতালে একটি জলের লাইনও দেয়নি। আবর্জনা সাফাইয়ের বিষয়েও উদাসীন।

কান্দি পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌতম রায় জল সংযোগের বিষয়টি পিএইচই-র দেখার কথা বলে দায় এড়িয়েছেন। আবর্জনা সাফাই প্রসঙ্গে তাঁর সাফাই, পুরভোট থাকায় ওই কাজে তেমন নজর দিতে পারিনি। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ সব কাজে সমন্বয়ের দায়িত্ব যাদের সেই রোগী কল্যাণ সমিতি কী করছে? রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা কান্দির মহকুমাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘এ বার সব দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যাগুলি মেটানোর ব্যবস্থা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kandi hospital drinking water Patient hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE