Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দ্বিজেন্দ্রলালের ভিটেয় রাতে জুয়ার আসর

নিজের শহরেই দীর্ঘদিন অবহেলায় কাটিয়েছেন কবি এবং নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। দেড়শো বছর পার করেও সেই ছবি বিশেষ বদলায়নি।

স্মৃতি: আবর্জনায় ঢেকেছে বসতজমি। —নিজস্ব চিত্র।

স্মৃতি: আবর্জনায় ঢেকেছে বসতজমি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

জীবৎকালে প্রিয় শহর কৃষ্ণনগর সে ভাবে আশ্রয় দেয়নি তাঁকে। আজও এই শহর তাঁর সম্পর্কে একই রকম উদাসীন। উদাসীন তাঁর জন্য একসময়ে গড়ে ওঠা স্মৃতিরক্ষা সমিতিও।

নিজের শহরেই দীর্ঘদিন অবহেলায় কাটিয়েছেন কবি এবং নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। দেড়শো বছর পার করেও সেই ছবি বিশেষ বদলায়নি। যাঁরা বাংলা তারিখ ধরে দ্বিজেন্দ্রলালের জন্মদিন পালন করেন, তেমনই অনেকে শনিবার দিনটি উদ্‌যাপন করেছেন তাঁর একশো ছাপান্নতম জন্মদিন হিসাবে।

তাঁর বাড়ির কাছে গিয়ে দেখা গেল, ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলার চরম নিদর্শন। বাসভবনের চারপাশে জমে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামঙ্কিত ফলক অপরিষ্কার। ন্যূনতম মালাটুকুও জোটেনি।

দেখা গেল, কৃষ্ণনগর সিটি রেলস্টেশন সংলগ্ন জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’টি নিঃসঙ্গ স্তম্ভ। নদিয়ারাজের দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের বাসভবনের প্রবেশ তোরণের ওই দু’টি স্তম্ভই দ্বিজেন্দ্রলালের জন্মভিটের শেষ স্মারক। তাঁর জন্মস্থান কৃষ্ণনগরে তাঁর পৈতৃক বাসভবনের ওইটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে। ইতিহাসের কাছে ওইটুকুই শেষ সম্বল!

এ হেন দুরবস্থা বহুদিন ধরেই চলছে। যে সুবিশাল বাড়িতে দ্বিজেন্দ্রলালের জন্ম, তার আর কোনও অস্তিত্ব নেই। বাড়ির কিছু অংশের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। বাকি অংশ হস্তান্তরিত হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে সামান্য কয়েক কাঠা জমি। তারই একদিকে রয়েছে দ্বিজেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার। অন্য অংশটি রয়েছে দ্বিজেন্দ্র স্মৃতিরক্ষা সমিতির হাতে।

এলাকার মানুষের অভিযোগ, বর্তমানে ওই অংশটি কার্যত অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়েছে! সারাবছর ঝোপজঙ্গল হয়ে থাকা ওই অংশে রাতের অন্ধকারে চলে জুয়ার আড্ডা। বছরে মাত্র একটি দিন সমিতির তরফে তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন করে দায় সারা হয়।

১৯৮৫ সালে সে কালের বিশিষ্টদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল দ্বিজেন্দ্রলাল স্মৃতিরক্ষা সমিতি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই সমিতি থাকার যৌক্তিকতা কোথায়?

সংস্থার বর্তমান সম্পাদক বাসুদেব মণ্ডল বলেন, “আমাদের সামর্থ্য সীমিত। যে জমিটি ঘিরে মানুষের অভিযোগ সেই জমিতে একটি অডিটোরিয়াম তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেজন্য অর্থ সংগ্রহ এখন আমাদের প্রধান কাজ।” আপাতত, বিস্মৃতি আর অবহেলার চাদরে মুখ ঢেকেছে এই কৃষ্ণনাগরিকের পৈতৃক ভিটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dwijendralal Ray House Casino
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE