Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টালিগঞ্জের ব্যর্থ হিরো এখন হাসপাতালের ডাকসাইটে দালাল!

সেই ব্যর্থ নায়কের কথায়, ‘‘কি করব বলুন, পেট তো চালাতে হবে। তাই রোগীদের সাহায্য করে যত সামান্য কমিশন নিই।’

বহির্বিভাগে-ভিড়: মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহির্বিভাগে-ভিড়: মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

প্রাণময় ব্রহ্মচারী
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

অস্থি বিভাগের সামনে পিলপিলে ভিড়। তবে, খেয়াল করলে বোঝা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অস্থি বিভাগের সেই ভিড়ে রোগীর চেয়ে দাপাদাপি বেশি দালালদের। রোগীর বাড়ির লোকজনও বলছেন, ‘‘কি বলব বলুন, হাসপাতালে এলেই ছেঁকে ধরছে!’’

দালাল দাপটে ব্যতিব্যস্ত হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘কি করব বলুন তো, সব আমলেই এদের দাপট। বাধা দিতে গেলেই শুনতে হচ্ছে ‘দাদাকে বলে দেব’!’’ কোন দলের কোন যে দাদা, তা বুঝতেই হিমসিম হাসপাতাল।

দালালদের সেই ভিড়ে, রয়েছে এমন মুখ যে একদা বাংলা সিনেমায় মুখ দেখিয়ে কদর না পেয়ে দালাল হয়ে হাসপাতাল দাপাচ্ছে এখন!

সেই ব্যর্থ নায়কের কথায়, ‘‘কি করব বলুন, পেট তো চালাতে হবে। তাই রোগীদের সাহায্য করে যত সামান্য কমিশন নিই।’’

দালালরাই ঠিক করে দিচ্ছেন, কোন রোগী কখন ডাক্তারের কাছে কখন দেখাবেন। রোগীদের লম্বা লাইন থেকেই তারা ধরে নিচ্ছে ‘খদ্দের’। শুধু তাই নয়, ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্র রোগীর পরিবারের কাছ থেকে তারাই ছিনিয়ে নিচ্ছে প্রেসক্রিপশন। তা নিয়ে দালালদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও বিরল নয়।

শুধু অস্থি বিভাগ নয়, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে করিয়ে দেওয়ার জন্যও বেসরকারি ল্যাবরেটরি ঠিক করে দেওয়া— সবই এখন দালাল নিয়ন্ত্রিত। যা থেকে তাদের আয় কম নয়। এক দালাল নির্বিকার গলায় বলছেন, ‘‘দিন খারাপ থাকলে শ’দুয়েক, ভাল থাকলে হাজার টাকাও ছুঁয়েছে দিনের আয়!’’

তার উপর, কোনও ভাবে রোগীর বাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে নার্সিংহোমে পাঠাতে পারলে তাদের পোয়া বারো। এক দালালের কথায়, ‘‘হাসপাতালের সব বিভাগে দালাল-রাজ চলছে। ইউএসজি থেকে এমআরআই, এক্স-রে থেকে সিটি স্ক্যান— সর্বত্র একই চিত্র। দালাল ধরতে না পারলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগী ও রোগীর বাড়ির লোকজন কিছুই করতে পারে না। তাও তো আমরা রোগীর কাছ থেকে কিছু নিই না, যা নিই দোকান ও ল্যাবরেটরি মালিকের কাছ থেকে।’’

বৃহস্পতিবার সকালে নবগ্রামের আলিমুদ্দিন মিঞা এসেছিলেন বুকে ব্যথা নিয়ে। তাঁকে ইসিজি’র সব ব্যবস্থা করে শুধু ‘মিষ্টিমুখ’ করানোর জন্য কিছু খরচ নিয়েছে এক দালাল।

ডাহাপাড়ার মৌমিতা সরকার অবশ্য জানান, তাঁকে অবশ্য মোটা টাকাই খসাতে হয়েছে দালালের কাছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সুপারিটেনডেন্ট দেবদাস সাহা বলছেন, ‘‘দালাল সমস্যার কতা শুনেছি। তবে, তা নিয়ে সরাসরি কেউ অভিযোগ জানান না। আর তার ফলেই হাসপাতালের কিছু করার থাকে না।’’

আর তাই, হাসপাতালও আছে, দালালও আছে, আর আছে, ‘মিষ্টিমুখ’ করানোর রেওয়াজ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tout Murshidabad Hospital Tollygunge Actor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE