প্রতীকী ছবি।
মালদহ ডিভিশনের ব্যস্ততম রেল স্টেশন ফরাক্কা জংশন। এই স্টেশনে ৩টি প্লাটফর্ম করোনা আবহের আগে ব্যাস্ত থাকত। ফরাক্কা ব্যারাজ হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা সহজ হওয়ায় ফরাক্কা স্টেশনের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৭১ সালে ফরাক্কা স্টেশনের যাত্রা শুরু, তারপর কখনও থেমে থাকেনি। পরে এনটিপিসি চালু হওয়ায় পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়ে যায় ফরাক্কা জংশন।
সকাল থেকে রাত ট্রেনে আওয়াজ লেগেই থাকত। তার সঙ্গে যাত্রী ও হকারদের হাঁকে মুখরিত থাকত স্টেশন চত্বর। টিকিট কাউন্টারের ছুটোছুটি, অফিস যাত্রীদের হাঁকডাক, তার উপর কখনও ভারি বুটের আওয়াজে জানিয়ে দিত বিএসএফ জওয়ান বা সিআইএসএফ জওয়ান বাড়ি থেকে কাজে এলেন বা ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন। সেই ভিড়ের আর দেখা নেই।
স্টেশনের নীচে যেখানে একটি গাছ আছে। সেখানে দু’জন ভবঘুরেকে দেখা যেত, তাঁরা কোথায় গেল তার হদিশ নেই। তাঁদের এই স্টেশনই ছিলঘরবাড়ি। যে প্লাটফর্মের চেয়ার নিয়ে টানাটানি হত, তা অনাদরে পড়ে। চেয়ারের উপর কাঁধের ব্যাগ রেখে আপনজনদের বসিয়ে টিকিট কাটতে আজ আর কেউ যায় না। সেই চেয়ারে জমেছে ধুলার আস্তরণ আর শুকনো গাছের পাতায় ভরে আছে।
সারাদিন যাত্রীদের যাওয়া আসায় মুখরিত ফরাক্কা স্টেশন এখন নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকদিন পর কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে হঠাৎ রেল প্লাটফর্মে বা টিকিট কাউন্টারে দেখা হওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই। মাত্র কয়েক মাস আগেও কেউ জানতে পারেনি রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে।
রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাজারো লোকের রুজি রোজগার। স্টেশনের নীচে চায়ের দোকান, হোটেল, সাইকেল গ্যারাজ, টোটো ও ট্যাক্সি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত যাত্রীর অপেক্ষায়। তাদের আর দেখা যায় না।
ফরাক্কার বিবেক রায় বলেন, করোনার আবহে ট্রেন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের অসুবিধা বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার মাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যেতাম। সেখানকার চিকিৎসায় মা অনেকটা সুস্থ ছিলেন। লকডাউনের পর থেকে আর কলকাতা যাওয়া হয়নি। মায়ের চিকিৎসাও বন্ধ, মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ট্রেন কখন আবার চলবে, তার দিন গুনছি। বাসে যাওয়ার মতো মায়ের অবস্থা নেই। আবার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কলকাতা যাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তাই ট্রেনের আশায় আছি।’’
ফরাক্কা স্টেশনে যারা বিভিন্ন ব্যবসা করতেন তারা এখন বেকার। স্বাধীন হালদার, কৌশিক ঘোষ, কেতাবুল শেখ স্টেশন এলাকায় কেউ চা বিক্রি করতেন, কারও আবার হোটেলের ব্যবসা ছিল। তাঁরা এখন গ্রামে গ্রামে কেউ আইসক্রিম বিক্রি করছেন। আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন। করেনা আবহে জীবন ও জীবিকায় পরিবর্তন এসেছে। তাঁরা আশায় রয়েছেন, আবার ট্রেন চলাচলের। ট্রেন চললে আবার স্টেশন হবে মুখরিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy