Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দুধ ও মেওয়ার চড়া দাম, পাত হারাচ্ছে শীতের পদ

মুদির দোকানের চালের গুঁড়োই এখন ভরসা। তার উপরে রয়েছে সান্ধ্য-সিরিয়াল। আর এ সবের কারণেই ঘরে ঘরে পিঠে পুলির আয়োজনে ভাটা পড়েছে অনেকটাই।

ক্রমশ কমছে পিঠে-পাটিসাপ্টা তৈরির ধুম। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

ক্রমশ কমছে পিঠে-পাটিসাপ্টা তৈরির ধুম। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

মেওয়া ঠেকেছে আড়াইশো টাকায়। দুধ ৫০ টাকা। মাঝ-পৌষের কাঁপুনিতেও পিঠে-পুলি বাড়ন্ত। ঢেঁকি বা জাঁতায় চালগুঁড়ো করার দিন গিয়েছে আগেই। মুদির দোকানের চালের গুঁড়োই এখন ভরসা। তার উপরে রয়েছে সান্ধ্য-সিরিয়াল। আর এ সবের কারণেই ঘরে ঘরে পিঠে পুলির আয়োজনে ভাটা পড়েছে অনেকটাই।

নিমতিতার আরতি গোস্বামীর দুই ছেলে, বৌমা নিয়ে ছোট্ট সংসার। আরতিদেবীর আক্ষেপ, “পৌষ মাস পড়লে অন্তত সাত-আট দিন তো পিঠেপুলি হতই। শাশুড়ির সঙ্গে দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই লেগে পড়তাম পিঠে করতে। রাতে তৈরি করে সকালে জলখাবার সারতাম তা দিয়ে। এখন আমার সময়ও কমেছে, শরীরেও কুলোয় না। আর সন্ধ্যে হলেই গোটা বাড়ির চোখ টিভির দিকে। দেখতে দেখতে সংক্রান্তিও চলে এল। ইচ্ছে আছে, সে দিনই দুধপুলি বা পাটিসাপ্টা করার। কিন্তু দুধ ৫০ টাকা, মেওয়া ২৫০ টাকা কেজি। তাও খাঁটি আর মেলে কই?”

সাগরদিঘির ষাটোর্ধ্ব বিমলাদেবী বলছেন, “এখনও পর্যন্ত বাড়িতে পিঠে করা হয়ে ওঠেনি। বৌমাদেরও তেমন আগ্রহ নেই। তা ছাড়া আড়াইশো টাকা কিলো মেওয়া। এ বার শান্তিনিকেতনে পৌষমেলায় গিয়েছিলাম। ১০ টাকা পিস পাটিসাপটা বিক্রি হচ্ছিল মেলায়। ১৫ পিস এনেছিলাম দুধ-ক্ষীরে ডোবানো পাটিসাপ্টা। মন ভরেনি। তাই ঠিক করেছি পৌষ সংক্রান্তিতে পাটিসাপ্টা না পারি দুধ-পিঠে করে দেব সকলকে।”

তবে ফরাক্কার শিবনগরের শাশ্বতী দাস এখনও চালিয়ে খেলছেন। ইতিমধ্যেই চার-পাঁচ দিন তিল পিঠে, দুধ পিঠে, পাটিসাপ্টা, রাঙা আলুর পিঠে তৈরি করেছেন। তিনি বলছেন, “বাড়িতে ছ’টি গরু আছে। চাল মিলে ভাঙিয়ে এনে শীতের সময় সকলকে পিঠে খাওয়ানোর আনন্দই আলাদা। তবে স্বামীর জন্য সব আয়োজন করতে হয় সুগার ফ্রি দিয়ে। ওর আবার সুগার কি না!’’

ফরাক্কার সুজাতা সরকার অবশ্য পিঠে তৈরির ঝক্কিতে নেই। তাঁর কথায়, “সন্ধ্যে হলেই একের পর এক সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত সবাই। তাই পিঠের ঝামেলায় কে আর যাচ্ছে? ছেলে এক দিন বায়না করেছিল। তাই শুনে মালদহ থেকে মা পাটিসাপ্টা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাতেই ম্যানেজ হয়ে গেছে। তবে পৌষ সংক্রান্তির দিন কিছু একটা করতে হবে।”

সুতির স্কুল শিক্ষিকা শ্যামলী দাম বলছেন, ‘‘এখন মফস্‌সল কিংবা গঞ্জের দোকানেও পিঠেপুলি বিক্রি হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে পাটিসাপ্টাও। দামও নাগালের মধ্যেই। তবে মেওয়ার বদলে তাতে নারকেলের পুর থাকছে। ফলে সেই স্বাদটা আর পাচ্ছি না।’’

শীতে পিঠে পুলির আয়োজন হয় বহু মুসলিম পরিবারেও। ইমামনগরের মমতাজ বেগম বলছেন, “ঢেকিতে চাল ভেঙে এনে পিঠে, আন্দোশা, পাকোয়ান তৈরি করি। তবে মেওয়া, ঘি-র দাম বড্ড চড়া। ইচ্ছে থাকলেও এখন দু’-তিন দিনের বেশি করতে পারি না।” পাটকেলডাঙার মনসুরা বিবি বলছেন, “ঠাকুমার কাছে শিখে এসেছিলাম পাকোয়ান, দুধ পিঠে। সেটাই কাজে দিয়েছিল শ্বশুরবাড়িতে। তবে এখন সে সব তেমন হয় না। সিরিয়াল ছেড়ে কেউ তো উঠতেই চায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE