Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মেরুকরণের সুফল পেয়েছে তৃণমূলও

ধর্মীয় মেরুকরণ যে হয়েছে তা অনেকটাই স্পষ্ট। উজ্জ্বল বিশ্বাসের কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৪০ শতাংশ। তেহট্ট ও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে তা ৩০ শতাংশেরও কম।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

তৃণমূল জিতেছে ঠিকই। কিন্তু নেতারা প্রায় সকলেই হেরেছেন। বাঁচিয়ে দিয়েছে শুধু মুসলিম ভোট। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ের পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই ছবিটাই পরিষ্কার হয়ে উঠছে ভোট পর্যবেক্ষকদের কাছে।

এই পর্যালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সাতটি বিধানসভার ফলাফল। এই সাত কেন্দ্রের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোট আছে চারটিতে — চাপড়া, কালীগঞ্জ, পলাশিপাড়া ও নাকাশিপাড়া। এর মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী চাপড়ায় এগিয়ে ছিলেন ৪৯ হাজারের বেশি ভোটে, পলাশিপাড়ায় প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে, কালীগঞ্জেও তা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রবল বিপর্যয় কাটিয়ে নাকাশিপাড়া থেকেও তৃণমূল এগিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটে।

অন্য দিকে, বাকি তিন বিধানসভা এলাকায় হার হয়েছে তৃণমূলের। এই তিনটিই জেলার অন্যতম বড় তিন নেতার— তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত, কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের নেতা তথা কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা। এবং কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থীকে জেতানোর জন্য অসীমকেই বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন দলনেত্রী।

ভোটের ফল বলছে, তেহট্টে প্রায় দু’হাজার এবং কৃষ্ণনগর দক্ষিণে প্রায় সাত হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। মূলত কৃষ্ণনগর শহর নিয়ে তৈরি কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে সংখ্যাটা প্রায় ৫৪ হাজার। ধর্মীয় মেরুকরণ যে হয়েছে তা অনেকটাই স্পষ্ট। উজ্জ্বল বিশ্বাসের কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৪০ শতাংশ। তেহট্ট ও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে তা ৩০ শতাংশেরও কম। গৌরী-অনুগামীদের দাবি, কৃষ্ণনগর উত্তরের তুলনায় তেহট্টে পিছিয়ে থাকা কিছুই নয়। তা বলে জেলা সভাপতির কেন্দ্রে লিড পাবেন না দলের প্রার্থী? উত্তরে যুক্তি সেই একই, মেরুকরণ! গৌরী দত্তের মতে, “সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি ঠেকাতে আমরা অনেক জায়গায় সাংগঠনিক ভাবে ব্যর্থ হয়েছি।”

তৃণমূলও কিন্তু মেরুকরণের সুফল পেয়েছে। এই বাজারেও তাদের ভোট ২০১৪-র লোকসভা ভোটের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে বিজেপির ভোট বেড়েছে ১৩ শতাংশ। খুব বড় ফারাক কি? তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে মেরুকরণ তাদের বিপক্ষে গিয়েছে কেননা সেখানে হিন্দু ভোটারেরা দলে ভারী। উল্টোটাও সমান ভাবে সত্যি। যে কৃষ্ণনগর পুরসভা সবচেয়ে বেশি লিড দিয়েছে বিজেপিকে, সেখানেও ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে এক মাত্র সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।

এই মেরুকরণ কার্যত সর্বহারাকরে দিয়ে গিয়েছে বামেদের। কংগ্রেস তো আগে থেকেই প্রায় সাইনবোর্ড ছিল, এ বার তারা প্রায় মুছে যাওয়ার মুখে। গত লোকসভা নির্বাচনে বামেদের পাওয়া ৩০ শতাংশ ভোট এ বার নেমে এসেছে মোটে নয় শতাংশে। কংগ্রেস হারিয়েছে প্রায় তিন শতাংশ ভোট। তা ভাগাভাগি করে নিয়েছে দুই দল— তৃণমূল এবং বিজেপি।

গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৬ শতাংশ ভোট। সেই হিসেবে তাদের ভোট কিন্তু বাড়েনি। বরং‌ সামান্য হলেও কমেছে। সিপিএম ও কংগ্রেস জোট ভোট পেয়েছিল প্রায় ৪১ শতাংশ। বিজেপি পিয়েছিল মাত্র মাত্র ৯ শতাংশ ভোট। জোটের ভোট প্রায় সরাসরি হাতবদল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সরল পাটিগণিত হয়নি। তৃণমূলের হিন্দু ভোটের একাংশ বিজেপির দিকে সরেছে। কৃষ্ণনগর উত্তর-সহ তিন কেন্দ্রের ফলাফল অন্তত তেমনই ঈঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেস ও বামেদের হাতছাড়া হওয়া সংখ্যালঘু ভোট সেটা পুষিয়ে দিয়েছে। বিশেষত করে কালীগঞ্জ ও পলাশিপাড়া কেন্দ্রে এমনটা হয়েছে বলে বাম নেতারা মনে করছেন।

বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রাণবন্ধু বিশ্বাসের দাবি, “তৃণমূল যে সংখ্যালঘু তাস খেলেছে তা অনেক জায়গাতেই সফল হয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোট প্রায় সবটাই তৃণমূলে চলে গিয়েছে।”

তা হলে, দিনের শেষে হাতে রইল সেই ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দ্বিখণ্ডিত হওয়ার হিসেবটুকুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE