Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ছাদনাতলায় খবর এল, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছেন হবু বর

গায়ে হলুদ হয়েছিল রবিবার। সোমবার সাঁঝে বিয়ের লগ্ন। কিন্তু বর এল না। সন্ধ্যায় ছাদনাতলায় খবর এল, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছেন হবু বর।

মূহ্যমান: শোকে পাথর মৃত বরের এক আত্মীয়। নিজস্ব চিত্র

মূহ্যমান: শোকে পাথর মৃত বরের এক আত্মীয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালবাগ শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

গায়ে হলুদ হয়েছিল রবিবার। সোমবার সাঁঝে বিয়ের লগ্ন। কিন্তু বর এল না। সন্ধ্যায় ছাদনাতলায় খবর এল, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছেন হবু বর।

অনেক দিনের প্রেম। রবিবার রাত মাঝরাতেও কথা হয়েছে দু’জনের— ‘তোমার খাওয়া হয়েছে?’ ‘হ্যাঁ, তুমি খেয়েছ তো?’ পুলিশকে এই বয়ান জানিয়েছেন কনে নিজেই।

অথচ ঘণ্টা দু’তিন বাদে, সোমবার ভোরে নিখোঁজ হয়ে যান মুর্শিদাবাদের নশিপুর রেলব্রিজ এলাকার সনাতন মণ্ডল (২৮)। সারা দিন খোঁজ-খোঁজ। বরকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে সন্দেহে কনের বাড়ির লোক এসে হইচইও বাধিয়ে দেয়। শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ খাগড়াঘাট স্টেশন লাগোয়া রেললাইন থেকে তাঁর দেহ মেলে।

আজিমগঞ্জ জিআরপি থানার ওসি মহাবীর বেরার বক্তব্য, ‘‘আমরা যত দূর জেনেছি, যুবকটি হাওড়া-মালদহ আপ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। বিয়ের পিঁড়িতে বসার বদলে তিনি আত্মহত্যা করতে গেলেন কেন, তা জানার চেষ্টা চলছে। আত্মঘাতী হওয়ায় তাঁকে কেউ প্ররোচিত করেছে কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।’’

গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির এক কাপড় কলে কাজ করতেন সনাতন। পড়শি তরুণীর সঙ্গে তাঁর অনেক দিনের সম্পর্ক। দুই পরিবার কথাবার্তা বলেই বিয়ে ঠিক করেছিল। কনের কথায়, ‘‘রবিবার রাত ২টো নাগাদ মোবাইলে আমাদের শেষ কথা হয়। আমি খেযেছি কি না, সনাতন জানতে চায়। আমিও জানতে চাই, ও খেয়েছে কি না। তার পরে ঘুমিয়ে পড়ি।’’

আরও পড়ুন: দিনে উধাও সদ্যোজাত, মিলল রাতে

সনাতনের বৌদি অনিতা মণ্ডলের কথা অনুযায়ী, খুব ভোরে সনাতন উঠে শৌচাগারে যান। তার পর থেকে বেপাত্তা। মোবাইল ফোনটি রাখা ছিল তাঁর বালিশের তলায়। বেলা যত বাড়ে, দুই বাড়িতেই উদ্বেগ বাড়ে। সনাতনের দাদা মানিক মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কোনও বদ মতলবে ভাইকে লুকিয়ে রেখেছি বলে সন্দেহ করে কনের আত্মীয়েরা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়।’’

দুই বাড়ির লোকজনই এখন মনে করছেন, এটা আত্মহত্যা নয়। সনাতন খুন হয়ে থাকতে পারেন। তাঁর বৌদি দাবি, ‘‘পাড়ার একটি ছেলে এই বিয়ে ভেস্তে দিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাইছিল। সে-ই দেওরকে খুন করে থাকতে পারে।’’ কনের মা-ও বলেন, ‘‘ছেলেটি আমার মেয়ের যোগ্য নয় বলে তার বিয়ের প্রস্তাবে আমরা রাজি হইনি।’’ কনে বলেন, ‘‘ছেলেটা আমার পিছনে লেগে থাকত। কিন্তু আমি সনাতনকেই ভালবাসি। ওকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।’’

মৃতের দাদা সাধনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে প্রতিবশী এক যুবক ও তার সঙ্গীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Groom Commits Suicide Lalbagh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE