Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিয়মিত চলুক ক্যারাটে ক্লাস

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের শেষ দিকে মুর্শিদাবাদের ২৯০টি বিদ্যালয়ের দু’জন করে শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান থেকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

হরিহরপাড়ায় প্রশিক্ষণে ব্যস্ত মেয়েরা। ছবি: মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়ায় প্রশিক্ষণে ব্যস্ত মেয়েরা। ছবি: মফিদুল ইসলাম

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৮
Share: Save:

ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দিতে বছর দু’য়েক আগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চালু হয়েছিল ক্যারাটে প্রশিক্ষণ। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান থেকে ওই সব বিদ্যালয়ের দু’জন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁরা বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু করেছিলেন। তিন মাসে ১২টি ক্লাস চলার পরে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। এখন হাতেগোনা কিছু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ চালু রেখেছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের শেষ দিকে মুর্শিদাবাদের ২৯০টি বিদ্যালয়ের দু’জন করে শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান থেকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষার শিক্ষকেরা মূলত ওই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা কয়েক দিন ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, সেই সময় ১২টি ক্লাস করার কথা বলা হয়েছিল। সেই মতো বিদ্যালয়গুলি ক্লাস নিয়েছিল।

বহরমপুরের চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেন বলছেন, ‘‘সেই সময় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছিল। সেই মতো প্রশিক্ষণ দেওয়াও হয়েছিল।’’ তবে ক্যারাটের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শিল্পী সেন বলছেন, ‘‘চারদিকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া জরুরি। আমরা শীঘ্রই ছাত্রীদের নিয়মিত আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’

লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান থেকে আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিতে বলেছিল। সেই সময় এই প্রশিক্ষণে ছাত্রীদের চাহিদা দেখে আর তা বন্ধ করিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বাইরের একজন প্রশিক্ষককে দিয়ে এখনও সপ্তাহে একদিন ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন ছাত্রী এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।’’

বহরমপুরের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘দেশ জুড়ে মেয়েদের উপর যে ভাবে নির্যাতন বাড়ছে তাতে খুব দু’শ্চিন্তা হচ্ছে। মেয়েরা বাড়ির বাইরে থাকলে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। এই পরিস্থিতিতে মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া খুবই জরুরি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে এক দিন করে আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া দরকার। এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।’’

ক্যারাটে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের শিক্ষা দফতরের কর্মাধ্যক্ষ কৃষ্ণেন্দু রায় বলছেন, ‘‘মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ওই প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখব। যদি পুনরায় আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়ার সুযোগ থাকে, আমরা ব্যবস্থা নেব।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দু’বছর আগের প্রকল্প। এখন কী অবস্থায় আছে দেখতে হবে। তবে চালু করার সুযোগ থাকলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ক্যারাটে প্রশিক্ষণ যে জরুরি সে কথা মানছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অমরকুমার শীল। তিনি বলছেন, ‘‘এটা রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের প্রকল্প। সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই শুরু হয়েছিল। সেটা নিয়মিত করা যায় কি না তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karate School Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE