বর্ষার দুপুর। পিচঢালা মসৃণ রাস্তা। টিপটিপে বৃষ্টিতে কেউ কোথাও নেই, এমনকী নজরে পড়ছে না পুলিশও।
দুই যুবকের খেয়াল হল, তাঁরা বাইক নিয়ে রাস্তায় ভিজতে বেরোবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ।
বৃষ্টিতে ভিজতে কে আর হেলমেট নিয়ে বের হয়! তার উপর আবার পুলিশ যখন রাস্তায় নেই, তখন স্পিডোমিটারের দিকেই বা তাকায় কে?
‘না’, তেমনটা ভাবলে মস্ত বড় ভুল হবে। নদিয়া জেলা পুলিশের কর্তারাই বলছেন সে কথা। পুলিশ রাস্তায় মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে জরিমানা করছে না বলে ‘কিছু হবে না’, এমন ভাবনাটা অচিরেই ভুল প্রমাণিত হবে, শহরের নাম যদি হয় কৃষ্ণনগর।
এ বার রাস্তায় দাঁড়িয়ে জরিমানা বা স্পটফাইনের পাশাপাশি নজরদারির কাজও করবে পুলিশ। এক বার তাদের হাত ফস্কে পালিয়ে গেলেও মিলবে না রেহাই। ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বাড়িতে যথাসময়ে পৌঁছে যাবে জরিমানার নোটিস। কী ভাবে, কোথায়, কখন ট্রাফিক আইনভঙ্গ করেছেন, তার সবিস্তার উল্লেখ থাকবে সেই নোটিসে। তা ছাড়াও ট্রেজারিতে জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশও থাকবে। এর পর টাকা জমা না দিলেই আদালতের সমন।
শুধু মোটরবাইক নয়, ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গকারী সমস্ত গাড়ির বিরুদ্ধে এই ধরনের ব্যবস্থা নিতে চলেছে জেলা পুলিশ। চলতি মাসেই জেলাসদর কৃষ্ণনগরে এই নিয়ম চালু হবে। জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিএসপি (ট্রাফিক) এসএম আজিম জানান, এখন মাঝেমধ্যে তল্লাশি করে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের গাড়ি আটকে জরিমানার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ট্রেজারিতে বা ব্যাঙ্কে ফাইন জমা দেওয়ার রশিদ দেখালে সেই গাড়ির কাগজপত্র হাতে পান গাড়ির মালিক। তবে এ বার থেকে নজরদারি ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করা হবে।
ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে কলকাতা বা অন্যান্য পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়। পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া জানিয়েছেন, এই নিয়ম নতুন নয়। জেলা সদর কৃষ্ণনগরে প্রথমে চালু করা হচ্ছে। পরে জেলার অন্যত্রও এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।
পুরো পদ্ধতিটা ঠিক কী রকম?
নদিয়া জেলাসদরের ৪০টি জায়গায় ট্র্যাফিক পুলিশ এবং সিভিক ভলিন্টিয়াররা আইন ভঙ্গকারী গাড়ির নম্বর লিখে ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসে জমা দেবে। পরে সেই সব গাড়ির নম্বর ধরে গাড়ির মালিকের কাছে ফাইন জমা দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হবে। কিন্তু কী ভাবে গাড়ির মালিককে চিহ্নিত করা হবে? আর তাঁরা ফাইনই বা জমা দেবেন কোথায়? এর উত্তরে এসএম আজিম জানান, ‘বাহন’ নামে একটি সফট্ওয়্যার রয়েছে। তার মাধ্যমে গাড়ির মালিকদের ঠিকানা খুব সহজেই পুলিশের হাতে চলে আসবে। আর রাজ্যের যে কোনও জায়গা থেকে অনলাইনে ফাইন জমা দেওয়া যাবে। জরিমানা জমা দেওয়ার পর রশিদ পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। কেউ জরিমানা না দিলে তা আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তখন আদালত থেকে সমন যাবে গাড়ির মালিকের বাড়িতে।
তবে মুর্শিদাবাদ জেলায় অবশ্য এখনও এমন কোনও পদক্ষেপ করার কথা ভাবতে পারেনি প্রশাসন। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য ১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল সরকারের কাছে, কিন্তু তা মেলেনি। ফলে পরিকল্পনা অথৈ জলে। ডিএসপি ট্যাফিক অশেষ ঝাঁ-র কথায়, ‘‘আমাদের সিসিটিভি নেই। তাই এই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়।’’ আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারি চিন্তামণি প্রামাণিক আবার জানিয়েছেন, ‘বাহন’ সফট্ওয়্যারটিও তাঁদের কাছে নেই। ফলে কবে কী হবে জানা নেই।
নদিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে জেলা সদরে ১ জন সাব-ইনসেপক্টর, ৪ জন এএসআই, ২৯ জন হোমগার্ড এবং ১২০ জন সিভিক ভলিন্টিয়ার ট্র্যাফিক সামলান। তাঁদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে তাঁদের সড়গড় করতে ফের প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে।
বর্তমানে ট্র্যাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা মাঝেমধ্যে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালান। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী না থাকায় এই কাজ করতে গিয়ে প্রচুর অসুবিধা, বিশেষ করে যানজট তৈরি হয়। কখনও কখনও আবার পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। এখন থেকে ট্র্যাফিক পুলিশ কিংবা সিভিক ভলেন্টিয়ার আইন ভঙ্গকারীকে ধরতে না পারলেও গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে, সেই তথ্য পাঠিয়ে দেবে কন্ট্রোল রুমে। কৃষ্ণনগর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের মাথায় পুরসভার উদ্যোগে ১৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। সেই ক্যামেরার ফুটেজও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানো হবে বলে নদিয়া পুলিশ জানিয়েছে।
(তথ্য সহায়তা: অনল আবেদিন, বিমান হাজরা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy