Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধর্নার মঞ্চেও স্পষ্ট ফাটল

শনিবারের ধর্না কর্মসূচীতে জেলার অধিকাংশ জায়গায় একতার বদলে তৃণমূলের অন্দরের বিভাজনের চিত্রটাই স্পষ্ট হল। 

উপরে, শান্তিপুরে ধর্নামঞ্চে শঙ্কর সিংহ। উপরে ডান দিকে, দুই নেতার মান ভাঙালেন রত্না ঘোষ। নবদ্বীপে ধর্না পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

উপরে, শান্তিপুরে ধর্নামঞ্চে শঙ্কর সিংহ। উপরে ডান দিকে, দুই নেতার মান ভাঙালেন রত্না ঘোষ। নবদ্বীপে ধর্না পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৭
Share: Save:

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথে নেমে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা জনসমক্ষে তুলে ধরার সুবর্ণ সুযোগ ছিল তৃণমূলের সামনে। কিন্তু শনিবারের ধর্না কর্মসূচীতে জেলার অধিকাংশ জায়গায় একতার বদলে তৃণমূলের অন্দরের বিভাজনের চিত্রটাই স্পষ্ট হল।

একটি-দু’টি হাতেগোনা জায়গায় দলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীকে এক মঞ্চে হাজির করা গেলেও অধিকাংশ জায়গাতেই যুযুধান নেতারা একই এলাকায় আলাদা-আলাদা ভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করলেন। তাতে দলের প্রবীণদের অনেকেরই মনে হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপির সামনে দলের সংহতির নিদর্শন তুলে ধরতে না পারলে সমস্যা হতে পারে।

চাপড়ার কথাই ধরা যাক। সেখানে স্থানীয় বিধায়ক রুকবানুর রহমান ধর্না কর্মসূচীর আয়োজন করেন। কিন্তু সেখানে দেখা যায়নি দলের ব্লক সভাপতি জেবের শেখকে। বড় আন্দুলিয়াতে দলের যুব সংগঠনের ডাকা এক মিছিলে উপস্থিত ছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রের খবর, জেবের এবং রুকবানুরের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।

এর আগে যে দিন কৃষ্ণনগরে একই বিষয়ে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল সে দিনও এই বিভাজন স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল। দুই নেতার অনুগামীদের নিয়ে আলাদা-আলাদা বাস গিয়েছিল। কোন নেতা বেশি লোক জোগাড় করতে পারেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও ছিল তীব্র। চাপড়ার হাটরা এলাকায় জেবের শেখের অনুগামীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল রুকবানুর শিবিরের বিরুদ্ধে।

এর পর আবার চাপড়াতে ধর্না কর্মসূচীতে দুই শিবিরের বিভাজন আবার সামনে এল। যদিও চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান দাবি করেন, “দলের নির্দেশ মতো কর্মসূচী পালন করেছি। জেবের শেখকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি আসেননি কেন বলতে পারবনা।” আর জেবেরের বক্তব্য, “বিধায়কের ধর্না কর্মসূচীতে আমাকে ডাকা হয়নি। যুব সংগঠন ডেকেছিল, সেখানে গিয়েছিলাম।”

ধর্না কর্মসূচীতে তৃণমূলের অন্দরের বিবাদ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে কালীগঞ্জেও। সেখানে প্রাক্তন বিধায়ক এবং দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার কো-অর্ডিনেটর নাসিরুদ্দিন আহমেদ ও কালীগঞ্জের বিধায়ক তথা দলের যুব সংগঠনের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হাসানুজ্জামানের শিবিরের বিভাজন এ দিন সামনে এসেছে। কালীগঞ্জ বাজারের কর্মসূচীতে হাসানুজ্জামান ও তাঁর শিবিরের লোকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আবার দেবগ্রামের কাটোয়া মোড়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মহিরুদ্দিন শেখের নেতৃত্বে তৃণমূলের অবস্থান বিক্ষোভ হয়। মহিরুদ্দিন এর আগে হাসানুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু দলীয় সূত্রের খবর, এখন তিনি নাসিরুদ্দিন-ঘনিষ্ঠ। এ দিন তাঁর আয়োজিত কর্মসূচীতে বিধায়ক শিবিরের কাউকে দেখা যায়নি। বরং নাসিরুদ্দিন আহমেদের শিবিরের অনেকের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।

শনিবার দুপুরে হরিণঘাটা শহরের অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে ব্লকের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ, বিধায়ক নীলিমা নাগ মল্লিক ও তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ হাজির ছিলেন। ছিলেন হরিণঘাটা শহর তৃণমূলের নবনিযুক্ত সভাপতি দেবাশিস বসু। কিন্তু দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে বিকেলে। এ দিন বিকেলে হরিণঘাটা যুব তৃণমূল জাগুলি মোড় থেকে একটি মিছিল বের করে। সেখানে দেখা যায়নি দেবাশিসবাবুকে। কয়েক জন কাউন্সিলরও অনুপস্থিত ছিলেন।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, উত্তম সাহা বছর তিনেক ধরে শহর তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। সদ্য তাঁকে সরানো হয়েছে। এ দিন তিনি বিশাল মিছিল করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কর্মী-সমর্থকরা এখনও তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। এ দিন অনেক নেতা-কর্মী এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে যান। উত্তমও তাঁদের বলেন, ‘‘আমাকে সরানোর ব্যাপারে দলের কোনও নেতা এখনওকিছুই জানাননি। ফলে এখনও আমি দলের সভাপতি হিসেবেই মিছিল ডেকেছি।’’আর দেবাশিসবাবু-র উক্তি, ‘‘আমি তো বিধানসভা এলাকার মূল মিটিংয়ে ছিলাম। জাগুলির মিছিলের ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছুই জানাননি। ফলে যেতে পারিনি।’’

এর ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছে মাত্র কয়েকটি জায়গায়। যেমন এ দিন চাকদহ বাসস্টান্ডে চাকদহের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা চাকদহ শহর তৃণমূলের সভাপতি দীপক চক্রবর্তী এবং চাকদহ শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস ওরফে সাধনকে এক মঞ্চে বসতে দেখা গিয়েছে। এই দু’জনের মতপার্থক্য বরাবরই তীব্র। আবার শান্তিপুর বিডিও অফিস প্রাঙ্গনে দলের ধর্না কর্মসূচীতে এক সঙ্গেই দেখা গিয়েছে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য, পুরপ্রধান অজয় দে-কে। যদিও তা মিনিট পাঁচেকের জন্য। এমনিতে অবশ্য তাঁদের সম্পর্কের

টানাপড়েন সর্বজনবিদিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Conflict TMC CAA Citizenship Amendment Act
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE