Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
অকেজো অনলাইন ব্যবস্থা

জমির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ, ভোগান্তি

‘অনলাইন’ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি থানা এলাকার দলিল রেজিস্ট্রেশনের কাজ ১০ দিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে ফের কবে থেকে রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করা যাবে সে বিষয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভগবানগোলা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২০
Share: Save:

‘অনলাইন’ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি থানা এলাকার দলিল রেজিস্ট্রেশনের কাজ ১০ দিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে ফের কবে থেকে রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করা যাবে সে বিষয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। রেজিস্ট্রি অফিসের ‘অন লাইন’ ব্যবস্থা অচল থাকায় জমি বিক্রি করতে পারছেন না বিক্রেতারা। ফলে তাঁদের কারও মেয়ের বিয়ে আটকে গিয়েছে। জমি বিক্রি করতে না পেরে জরুরি চিকিত্‌সা পরিষেবা পেতে কেউ স্ত্রীকে নিয়ে রাজ্যের বাইরে যাওয়ার সূচিও বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। অনলাইন ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ায় লালগোলা, ভগবানগোলা রানিতলা মিলিয়ে মোট ৩টি থানা এলাকার বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

ভগবানগোলা রেজিস্ট্রেশন অফিসে দলিল লেখার কাজ করেন দলিল লেখক ও আইন মোহরার মিলে মোট ১০৬ জন। গত ৩১ মার্চ থেকে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় তাঁদেরও রুটিরুজিতে টান পড়েছে। ভগবানগোলা রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্ব রয়েছেন অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সাব রেজিস্ট্রার হিমাদ্রীশেখর ঋষি। তিনি বলেন, “রেজিস্ট্রেশনের কাজ বন্ধ থাকায় অনেকেই অসুবিধায় পড়ছেন। সে কথা জানিয়ে দ্রুত সমাধান চেয়ে ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেছি।” ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার হুমায়ুন আলি বলেন, “আমিও ওই সমস্যার সামাধানের জন্য রেজিস্ট্রেশন বিভাগের রাজ্য দফতরের আইজি এবং ডিআইজিকে জানিয়েছি।” তাতেও সঙ্কট মেটেনি। এ জেলার রেজিস্ট্রি অফিসগুলির অনলাইন ব্যবস্থা দেখভাল করে একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুর শহর লাগোয়া চুনাখালি এলাকায় ‘অনলাইন’ ব্যবস্থায় বড়সড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনলাইন চালু করতে খুব দামি চারটে ‘ডিভাইস’ প্রয়োজন। সেগুলো পেলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে সেই ‘ডিভাইস’ কবে মিলবে তা কিন্তু জানা নেই দেখভালের দায়িত্বে থাকা ওই সংস্থার কর্তাদের।

ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের ভগবানগোলা শাখার সভাপতি অশোক পাণ্ডে বলেন, “ওই অফিসে তিনটি থানা এলাকার লোকজনের বিক্রি কবলা, লিজ, চুক্তি ও বায়নানামা মিলিয়ে দৈনিক শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রি হয়। দলিল লেখার জন্য কমিশন বাবদ অর্থ পাওয়া যায়। ফলে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় লেখক ও আইন মোহরাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।”

ভগবানগোলার হরিরামের চক গ্রামে বাড়ি উপলা বিবির। ২৪ এপ্রিল তাঁর মেয়ের বিয়ে। জমি বিক্রি না করলে তাঁর পক্ষে মেয়ের বিয়ের দেওয়া সম্ভব নয়। জমির বিক্রির জন্য তিনি কিছু টাকা বায়না নিয়েছেন ক্রেতার কাছ থেকে। রেজিষ্ট্রির সময় বাকি টাকা মিলবে এই শর্তে। উপলা বিবি বলেন, “রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় বকেয়া টাকা মিলছে না। ফলে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা আটকে রয়েছে।” ওই একই কারণে লালগোলার টিকটিকি পাড়ার আলাউদ্দিন শেখের স্ত্রীর চিকিত্‌সাও বন্ধ রয়েছে। আলাউদ্দিন বলেন, “বহরমপুর ও কলকাতায় চিকিত্‌সা করে নিঃস্ব হয়েছি, কিন্তু স্ত্রীর রোগ সারেনি। তাই তাকে নিয়ে বেঙ্গালুরু যাব। তার জন্য জমি বেচতে হবে। জমি কেনার জন্য গ্রাহক বায়নার টাকা দিয়েছে। কিন্তু রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় বাকি টাকা মিলছে না। তারফলে বেঙ্গালুরু যাওয়াও যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE