Advertisement
০৭ মে ২০২৪

মাত্রা ছাড়াতেই বিপদ বাড়ছে পিকনিকে

শীত-সকালে হইহই করে ছুটছে গাড়ি। গতির বহরে চোখ কপালে ওঠে। কোথাও আবার রাতভর বুকে দামামা বাজায় ডিজে। বাড়ছে দুর্ঘটনা, মৃত্যু, অশান্তি এবং অস্বস্তি। আনন্দের পিকনিক কেন এমন পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার গতিতে রক্ষা নেই, দোসর শব্দদানব! পিকনিক মরসুমে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেই ডিজে-দৌরাত্ম্যকেই একপ্রকার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকার লোকজন। তাঁরা বলছেন, ‘‘তা ছাড়া আর উপায় কী বলুন? কিছু বলতে গেলেই তো উটকো ঝামেলা হবে।’’

শব্দ যখন জলেও। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

শব্দ যখন জলেও। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

গতিতে রক্ষা নেই, দোসর শব্দদানব!

পিকনিক মরসুমে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেই ডিজে-দৌরাত্ম্যকেই একপ্রকার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকার লোকজন। তাঁরা বলছেন, ‘‘তা ছাড়া আর উপায় কী বলুন? কিছু বলতে গেলেই তো উটকো ঝামেলা হবে।’’

অতএব মাঘের মাঝরাতেও দু’চোখের পাতা এক করতে পারছে না কল্যাণী থেকে করিমপুর, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর। ডিজে আসলে ডিস্ক-জকি। কিন্তু গাঁ-গঞ্জ-মফস্‌সলে উন্নত সাউন্ড-সিস্টেমে বাজানো হয় রেকর্ডেড বাজনা। আর সেই ডিজে ছাড়া পিকনিকের কথা এখন আর ভাবাই যায় না।

দিনকয়েক আগে করিমপুরের অল্পবয়সী কয়েক জন পিকনিকের আয়োজন করেছিল। চাঁদাও তোলা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করতে এসে টাকা অনেক বেশি লেগে যায়। কিন্তু তাতে কী! মেনু থেকে মাংস বাদ দিয়ে চলে এল ডিম। কিন্তু ডিজের সঙ্গে আপস করতে রাজি নয় কেউ। তাদের কথায়, ‘‘খাওয়াটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু ডিজে ছাড়া পিকনিক? অসম্ভব!’’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ওই আওয়াজে বুক ধড়ফড় করে। রাতে ঘুমোতে পারা যায় না। বাজি-পটকার থেকেও তো এটা অনেক বেশি শব্দ দূষণ করে। অথচ প্রশাসনের নজরদারি কোথায়?’’ ফলে ডিজের দাপট চলছেই।

আর পিকনিককে কেন্দ্র করে অশান্তি? তা-ও আছে। বছর দু’য়েক আগে শান্তিপুরের অদ্বৈতপাঠে পিকনিকে তারস্বরে মাইক বাজিয়ে চলছিল নাচগান। বার বার নিষেধ করার পরেও সে ফুর্তিতে লাগাম টানা যায়নি। শেষতক প্রতিবাদ করায় স্থানীয় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল সেই পিকনিক দলের বিরুদ্ধে। রাতদুপুরে গানের গুঁতো থামাতে বলায় অশান্তিও বড় কম হয় না। দুই জেলা জুড়ে এমন একাধিক নজির রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, সব কিছুরই একটা মাত্রা থাকা উচিত। সেটা না মানাতেই বিপদ বাড়ছে।

বেথুয়াডহরির রাজারাম মল্লিক বলেন, “পিকনিকের দিনগুলিতে প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত। পিকনিকে এসে বহু লোকজন এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, পদে পদে দুর্ঘটনার সম্ভবনা থেকেই যায়। অথচ ওদের নিষেধ করার কেউ নেই। পুলিশেরও তেমন দেখা মেলে না।’’

লালবাগ পর্যটন সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার স্বপন ভট্টচার্য বলেন, ‘‘পিকনিক শেষে অনেকেই অসুস্থ অবস্থায় গাড়িতে ওঠেন। রাস্তায় কোনও ট্রাফিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে ছুটতে থাকে গাড়ি। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসন সক্রিয় না হলে নাকাশিপাড়ার মতো ঘটনা হামেশাই ঘটবে।’’ ১৯৯৮ সালের ১৩ জানুয়ারি লালবাগ থেকে পিকনিক সেরে ফেরার পথে কুয়াশায় ঢাকা জলঙ্গির পদ্মায় উল্টে গিয়েছিল বাস। একজন শিক্ষক সহ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের। সে স্মৃতি আজও ফিকে হয়নি।

মুর্শিদাবাদের আইসি আশিস দেব বলেন, ‘‘শব্দবিধি না মানায় ইতিমঘধ্যে বেশ কয়েকটি সাউন্ড-বক্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সচেতন করা হচ্ছে পিকনিক করতে আসা লোকজনকেও।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলছেন, “রাস্তা হোক বা পিকনিক স্পট, সর্বত্রই পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকে। তবে নাকাশিপাড়ার ঘটনার পরে জাতীয় ও রাজ্য সড়কে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।” (শেষ)

(তথ্য সহায়তা— সামসুদ্দিন বিশ্বাস, সুস্মিত হালদার, শুভাশিস সৈয়দ ও কল্লোল প্রামাণিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Danger Picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE