কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট।—ফাইল চিত্র।
ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণনগর কলেজিয়েটে ঘনিয়েছে আর্থিক দুর্নীতির মেঘ। কৃষ্ণনাগরিকেরা মর্মাহত। কারণ তাঁদের শ্লাঘা, স্মৃতি, বড় হওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে এই স্কুল। তা সে কলেজিয়েটের ছাত্র হন বা না-হন।
শতাব্দী-প্রাচীন এই স্কুলের প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি জেলাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে আর্থিক দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন ওই স্কুলেরই সহ-শিক্ষকেরা। যদিও প্রধানশিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস তা অস্বীকার করেছেন। পাল্টা দাবি করেছেন, স্কুলে কিছু বিষয়ে নিয়মের কড়াকড়ি করার চেষ্টা করছিলেন বলেই শিক্ষকদের একাংশের চক্ষুশূল হয়েছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, গোটা বিষয়ের পিছনে রহস্যটা কী? কে ঠিক বলছেন আর কে-ই বা ভুল।
টিচার্স রুমের অন্দরেও মতবিরোধ শুরু হয়েছে। এক পক্ষ মনে করছে, ব্যক্তি স্বার্থে সামান্য ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সামনে আনছেন এক শ্রেণির শিক্ষক। তাদের কথায়, “প্রধান শিক্ষকরে ব্যবহারের কিছু সমস্যা আছে। তাঁর ব্যবহারে অনেক সময়ই শিক্ষকেরা অপমানিত বোধ করেন। তাই প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গে কিছু শিক্ষকের বিরোধ তৈরি হয়েছে। ‘ইগো’র সমস্যা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে।” এক শিক্ষকের কথায়, “প্রথম থেকেই প্রধান শিক্ষক এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা কারও কারও মানতে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে চারটে পর্যন্ত স্কুল খোলা রাখা, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো, শিক্ষকদের বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু, শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন আটকানোর মতো একাধিক বিষয় রয়েছে। স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে অনেকেরই।”
কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল
• প্রতিষ্ঠা: ১৮৪৬ সাল • প্রথম অধ্যক্ষ: ডেভিড লেস্টার রিচার্ডসন
• স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক: মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামতনু লাহিড়ী, বেণীমাধব দাস প্রমুখ • স্কুলের কৃতী ছাত্র: মীর মোশারফ হোসেন, হেমচন্দ্র বাগচী, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ • বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা: প্রাইমারি, সেকেন্ডারি মিলিয়ে ৪১ জন• ছাত্র সংখ্যা: সাড়ে চোদ্দোশো
এই অভিযোগ মানতে নারাজ প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী শিক্ষকেরা। তাঁরা দাবি করেছেন, টাকা নিয়ে উত্তরপত্র বিক্রি করে দেওয়া থেকে শুরু করে মিড ডে মিল ও স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করা, সবাইকে অন্ধকারে রেখে আর্থিক লেনদেনের মতো অসংখ্য কুকীর্তির সঙ্গে প্রধানশিক্ষক জড়িত। অভিযোগকারীদের এক জনের কথায়, “আমাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন কিনা তা তদন্তে প্রমাণিত হবে। যাঁরা প্রধান শিক্ষকের হয়ে সাফাই গাইছেন তাঁরা আসলে ওঁকে নিজেদের স্বার্থে সন্তুষ্ট করতে চাইছেন।” শিক্ষক বিশ্বরূপ পাত্র বলছেন, “আমাদের কাছে পর্যাপ্ত নথি রয়েছে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে।”
মনোরঞ্জনবাবু আগে তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তিনি কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষিক হিসাবে যোগ দেন। শিক্ষকদের একটা বড় অংশের দাবি, মনোরঞ্জনবাবু সকলের উপর নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চান।। এক শিক্ষকের কথায়, “আসলে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের একটু বুদ্ধি করে সামলাতে হয়। একটু এ দিক-ও দিক হলেই ইগো সমস্যা তৈরি হয়।” সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি(পশ্চিমবঙ্গ)র কলেজিয়েট স্কুল ইউনিট সভাপতি আজিজুল হকের বক্তব্য, “আমরা চাই, প্রধানশিক্ষক ও কিছু সহ-শিক্ষক তাঁদের নিজেদের ইগোর সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসুন।” যদিও প্রধানশিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলছেন, “স্কুলকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে গেলে কিছু পদক্ষেপ করতেই হবে। ক্ষমতা থাকলে ওঁরা আমার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করে দেখান।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy