Advertisement
১১ মে ২০২৪
corona virus

ঘরবন্দি অবসরে রমরমা গর্ভনিরোধকের, টান দোকানে

কৃষ্ণনগর শহরে নানা গর্ভনিরোধকের, বিশেষ করে কন্ডোমের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।

ছবি:শাটারস্টক

ছবি:শাটারস্টক

সুদীপ ভট্টাচার্য
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩২
Share: Save:

লকডাউনের বাজারে বিক্রি বেড়ে গিয়েছে গর্ভনিরোধকের। শহর থেকে গ্রাম-মফস্সল, স্টকিস্ট থেকে ওষুধের দোকানে খুচরো বিক্রি, সব হিসেবেই ছবিটা পরিষ্কার। গ্রামে-গঞ্জে অনেক ওষুধের দোকানে জোগানে টান পড়াও শুরু হয়েছে।
লকডাউনের জেরে গত দিন দশেক অফিস-কাছারি সব বন্ধ। আশপাশের এলাকা থেকে প্রতি দিনের শহরমুখী মানুষের স্রোত আপাতত নেই। তবুও কৃষ্ণনগর শহরে নানা গর্ভনিরোধকের, বিশেষ করে কন্ডোমের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। পাত্রবাজারের মুখে এক ওষুধের দোকানের বিক্রেতা কল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘‘লকডাউনের আগেও যেখানে মাসে ১০০ প্যাকেট কন্ডোম বিক্রি করতাম, শুধু গত দশ দিনেই বিক্রি হয়েছে তার বেশি। বরং সমস্ত সংস্থা ঠিক মতো জোগান দিতে পারছে না। না-হলে বিক্রি আরও বাড়ত।’’

কৃষ্ণনগরের এক ওষুধের সাপ্লায়ার সঞ্জীব রায়ের দাবি, দিন দশেক ধরে কন্ডোম বিক্রি প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। গর্ভনিরোধক পিলও দ্বিগুণ জোগান দিতে হচ্ছে। একই হিসেব দিচ্ছেন কালীগঞ্জের এক স্টকিস্টও। তাঁর দোকানে গর্ভনিরোধক পিল ও ‘ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল’ বিক্রি প্রায় দেড় গুণ বেড়ে গিয়েছে জানিয়ে শান্তিপুরের দোকানদার সুব্রত মৈত্র বলেন, ‘‘রাস্তায় পুলিশি ঝামেলার ভয়ে অনেক সময়ে মহিলারা দোকানে আসছেন। তাঁরা কন্ডোমের চেয়ে পিল নিতেই বেশি পছন্দ করছেন।’’

তেহট্টের এক ওষুধের দোকানদার অরিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘গত ২২ মার্চ ‘জনতা কার্ফু’র দিনই অনেকে বেশি-বেশি করে কন্ডোম কিনে নিয়ে গিয়েছে।’’ তাঁদের মতে, লকডাউনের আগে-পরে ভিন্ রাজ্য বা জেলায় কাজ করা বহু মানুষ ঘরে ফিরেছেন। শহরে-গাঁয়ে গর্ভনিরোধক বিক্রি বাড়ার সেটাও একটা বড় কারণ। এমনিতে ওষুধের ছাড়াও স্টেশনারি দোকান, পান-সিগারেটের দোকান, শপিং মল বা অনলাইনেও গর্ভনিরোধক পাওয়া যায়। লকডাউন চলায় সেই সব রাস্তা বন্ধ। কিন্তু গাঁয়ে-গঞ্জে বিভিন্ন দোকানে যা স্টক ছিল তা শেষ হয়ে যাওয়ায় আর নতুন করে মাল পাওয়া যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করছেন চাপড়া থেকে ধুবুলিয়া নানা এলাকার ব্যবসায়ীরা।

চাপড়ার শ্রীনগরের ওষুধ বিক্রেতা সনৎ দাস বলেন, ‘‘মাসে এক বার মাল তুলি। এ রকম হবে তো বুঝিনি! সারা মাসের জন্য তোলা কন্ডোমের স্টক দশ দিনেই বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু স্টকিস্ট মাল পাঠাচ্ছে না। বলছে, লোক পাঠিয়ে নিয়ে আসতে।’’ কিন্তু লকডাউনের বাজারে তাঁদের পক্ষেও মাল আনতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

লকডাউনের দিনগুলিতে দাম্পত্য অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন মনোবিদ মোহিত রণদীপ। তাঁর মতে, এখনকার ব্যস্ত জীবনে নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ বড় কম। লকডাউনে টানা ঘরে থাকায় অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল মানুষজনের শারীরিক ও মানসিক চাপ কমেছে। নিজেদের জন্য সময় বেড়েছে। ‘‘কিছু ক্ষেত্রে আবার করোনা ভীতির কারণে সব সময়ে যে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, তা থেকে মুক্তি পেতেও হয়তো কেউ-কেউ যৌনতার আশ্রয় নিচ্ছেন’’, মত মোহিতের।

অবসরের অভাবে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যেতে থাকা দম্পতিরা ফের নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন, ভাইরাস জর্জরিত সময়ে এটুকুই যা সুখবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Virus LockDown Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE