Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অষ্টকে তৃণমূল-বিজেপি ভাই-ভাই

গাজনের দলে ঢুকলেই শিল্পীদের নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয় ধুয়েমুছে একাকার হয়ে যায়।

নাচের তালে।  নিজস্ব চিত্র

নাচের তালে। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৪৮
Share: Save:

গেরস্ত বাড়ির বড় উঠোনটায় ঘুরে-ঘুরে নাচছেন রাধা, কৃষ্ণ, বলরাম আর সখী।"আমার না ফুটিতে ফুল, আশালতার ছিঁড়ে গেছে মূল, ঝড়ে ভাঙে পাখির বাসা,আমার হলো তেমনি দশা"— গানের তালে-তালে ঢোল, সানাই বাজছে। আর সুর করে দোহার দিচ্ছেন কয়েক জন।

নোট বুক হাতে গান ধরেছেন বিজেপি কর্মী কমল মিত্র, ঢোল বাজাচ্ছেন সিপিআইএম সমর্থক উত্তম সর্দার আর খনজনিতে তাল দিচ্ছেন তৃণমূল কর্মী দীপক ভৌমিক। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা অষ্টকের দলে একজোট। সেখানে তাঁদের কোনও রেষারেষি, বিবাদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয় মুছে একটাই নাম— অষ্টকের দলের শিল্পী।

রানাঘাটের ২ নম্বর ব্লকের আইশমালি অঞ্চলের খড়ের মাঠ গ্রামে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এক সময় পূর্ববঙ্গ থেকে কৃষিকাজের যুক্ত হয়েছিলেন। চৈত্র মাসের শেষ সাত দিন তাঁদের গ্রামের প্রায় জনা সত্তর নানা বয়সের পুরুষ তিনটি দলে ভাগ হয়ে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে গাজনের গান করেন। এই দলে ঢুকলেই শিল্পীদের নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয় ধুয়েমুছে একাকার হয়ে যায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘‘দেওয়ালে প্রার্থীর নামের জায়গা ফাঁকা রেখে বাকিটা লিখে এসেছিলাম, তখনও প্রার্থী নিয়ে জটিলতা ছিল। এখন ফিরে গিয়ে হয়তো দেখবো নাম লেখা হয়ে গিয়েছে।’’—বলেন বিজেপি কর্মী কমল। ঢোলটা কাঁধ থেকে নামিয়ে গামছা দিয়ে মুখটা ভাল করে মুছে উত্তম আবার বলেন, "এই তো আসার আগেও সিপিএম এর পোস্টার বিলি করে এলাম। এই ক’দিন থাকবো না বলে এসেছি। চড়ক শেষ হলে, পয়লা বৈশাখ থেকে আবার ভোটের প্রচারে দলের সঙ্গে বেরোবো।’’ তৃণমূল কর্মী দীপক আবার বলেন, "চড়ক শেষ হলেই কত কাজ। পতাকা লাগানো, মিছিলে যাওয়া। তবে এই ক’টা দিন রাজনীতি থেকে ছুটি। সকলে আমরা এক।’’

এক দল অষ্টকের গান করেন, এক দল গাজনের দান নিয়ে থাকেন আর এক দল সং সেজে নানা সামাজিক পালা করে দিনের শেষে এক জায়গায় মিলিত হন। রাতটা একসঙ্গে কাটিয়ে আবার পর দিন সকালে বেরিয়ে পড়া নানা দিকে। নীল পুজোর আগের দিন সকলে গ্রামে ফিরে এসে নীল পুজোর আয়োজন করেন। এ ভাবেই চলছে ৪৫ বছর । পালা গান শেষ হয়। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবুডুবু। ফিরতে হবে সেই মামজোয়ান। ওখানেই আজ তিন দলের মেলার কথা। এই ফাঁকে রাধা-কৃষ্ণ ওরফে সদ্য মাধ্যমিক দেওয়া রূপম তরফদার আর বি এ প্রথম বর্ষের ছাত্র পবিত্র ভৌমিক নেট অন করে মোবাইলের মুখ গুঁজেছেন। একই পাত্রে মুড়ি নিয়ে খাচ্ছেন কমল, উত্তম, দীপক সক্কলে। অষ্টক তাঁদের এক করে দিয়েছে কয়েক দিনের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE