পড়ে আছে চালছাড়া ঘর। চর পরাশপুরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
কোনও ঘরে শেয়ালের পরিপাটি সংসার। কোথাও আবার খড়ের গাদা, এক পাশে বাঁধা আছে খান তিনেক ছাগল। কোনও ঘরেরই ছাদ নেই, দেওয়াল ভাঙা ইটের পাঁজা।
নিজভূমি নিজগৃহ প্রকল্পের ১৯৩টি বাড়ির ভোটের মুখে এটাই চেহারা।
বাংলাদেশের চরের গা ঘেঁষা ভারতের শেষ ভূখণ্ড চর পরাশপুরে সরকারি ওই প্রকল্পের চেহারাটা এমনই, মুখ থুবড়ে পড়া।
কেনই বা তাদের তড়িঘড়ি তৈরি করা হয়েছিল, কেনই বা তার অন্দরে চরের বাসিন্দাদের ঠিকানা হল না— তার কোনও সদুত্তর পঞ্চায়েত বা প্রশাসন, নেই কারও কাছে। তবে ভোটের আবহে বিরোধীরা ওই প্রায় পরিত্যক্ত ঘরগুলির দিকেই আঙুল তুলে প্রচারে নেমেছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
চরের বাসিন্দা জাবদুল মণ্ডল বলছেন, ‘‘পদ্মার হুহু হাওয়ায় ঘর তৈরি দেখে আমরা বুকে বল পেয়েছিলাম। কিন্তু বণ্টন আর হল না। বরং নদীর হাওয়া টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল!’’
ভোট আসে তার পরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সে পর্ব মিটে গেলে হাওয়া মরে আসে। নিজ ভূমি নিজগৃহের সেই সব চালা ঘর আবার চেনা চরের চেহারায় ফিরে যায়।
সীমান্তরক্ষীদের অনুশাসন আর বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য পরিষেবাহীন চরে সব হারা মানুষেরা সরকারি একটি প্রকল্পের মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে থাকেন। চরের এক্রামূল আলি বলছেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে, আমি তখন ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে বাড়ির খরচ পড়েছিল এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা। চরের মানুষের মনে ভরসা হয়েছিল— শেষতক সরকার ভাবল তাঁদের কথা। কিন্তু ঘরের চালায় হাওয়ার দাপট লাগতেই মালুম হল এ সবই নিছক চোখের ভুল।’’
ঝাঁঝালো সুরে নাজিরন বিবি বলছেন, ‘‘আমাদের দেওয়া হয়নি বটে, তবে কেউ কেউ ভরসা করে নিজেরাই সংসার পেতেছিলাম। কিন্তু দমকা হাওয়ায় দেওয়াল ভেঙে পড়েছিল। বর্ষা নামতেই ওই ঘরে বুক সমান জল জমেছিল, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফুটো হয়ে গিয়েছিল চালার টিন।’’ নজিরনকে সমর্থন করল গোটা চর। তাঁদের দাবি, তাঁরা বার বার উঁচু এলাকায় ঘর তৈরি করতে পরামর্শ দিলেও সে সবে কান দেননি ঠিকাদারেরা। যার যেখানে পাট্টা আছে, সেখানেই হবে গৃহ। এখনও চরে কান পাতলেই শোনা যায়, ‘আমাদের কেউ দেখার নেই বাবা। এক শ্রেণির আমলা, নেতা আর ঠিকাদারেরা মিলে আমাদের মতো অসহায় মানুষের ঘরটাও খেয়ে নিল।’ সেই সময়ে জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় বামেরা। সিপিএমের তৎকালীন জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাইফুল মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা তখন চেয়ারে থাকলেও নতুন তৃণমূল সরকারের সৌজন্যে নিধিরাম সর্দার। আমাদের পুরোপুরি আড়াল করে ওই কাজ করা হয়েছিল।’’
গোটা বিষয়টি নিজে দেখেও হতবাক জলঙ্গির বিডিও কৌস্তুভকান্তি দাস। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কিছু দিন আগে পরাশপুর চরে অন্য একটি কাজে গিয়ে ঘরগুলো দেখে অবাক হয়েছি। ভোট মিটলে আবারও সেখানে গিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’’
জাবদুল বলছেন, ‘‘কিন্তু ভোট মিটে গেলে কারও পা তো চরে পড়ে না দাদা, এটাই নিয়ম যে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy