Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

সৎকারে বিধিভঙ্গে গ্রামে থাবা কোভিডের

সৎকারের নিয়ম মানতে গিয়ে সরকারি ‘নিয়ম বিধি’র দফারফা করার ফলও মেলে হাতেনাতে। দিন কয়েকের মধ্যেই ওই চিকিৎসকের পরিবার এবং শ্মশানযাত্রী মিলিয়ে মোট ১৯ জনের কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা 
সুতি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৮
Share: Save:

শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দিতে নিজের চিকিৎসা আর আপন হাতে ফেলে রাখেননি সুতির ভাবকি গ্রামের এক গ্রামীণ চিকিৎসক। কিন্তু বহরমপুরের কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি।

লালারস পরীক্ষা করে পরের দিন হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়— কোভিড পজ়িটিভ। নিয়ম মেনে রাসায়নিক ছড়িয়ে দেহ মুড়ে দেওয়া হয় পলি-পেপারে। পরিবার-পরিজনদের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি সৎকারের যাবতীয় বিধিও জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। তবে সে কথায় তেমন আমল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি পরিজনেরা। গ্রামের পরিচিত ‘হাতুড়ে’র সৎকার ‘যথাযথ নিয়ম মেনে’ করার তাগিদে সুতির শ্মশানে দেহ নিয়ে গিয়ে খুলে ফেলা হয় পলি-পেপারে জড়ানো দেহের আচ্ছাদন। তার পর মুখাগ্নি থেকে অন্যান্য নিয়ম মেনে দাহ করা হয় তাঁকে। সৎকারের নিয়ম মানতে গিয়ে সরকারি ‘নিয়ম বিধি’র দফারফা করার ফলও মেলে হাতেনাতে। দিন কয়েকের মধ্যেই ওই চিকিৎসকের পরিবার এবং শ্মশানযাত্রী মিলিয়ে মোট ১৯ জনের কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ে। আর তার জেরেই ভাবকি গ্রামটিকে কনটেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করে ঘিরে দিয়েছে প্রশাসন।

কোভিড আবহে, ধরে আনতে বললে ফল দাঁড়ায় বেঁধে আনার! সরকারি নিয়ম উজিয়ে এখন ওই গ্রামের আবাদি মানুষের আনাজপাতি বাজারে বিকিকিনিও বন্ধ করে দিয়েছে পাইকারেরা। শুধু তাই নয়, ভাবকির মানুষজন পড়শি গ্রামে মুদির দোকানে গেলেও তাঁদের ‘বয়কট’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রামের অনেকেই কাজ করেন আশপাশের বিড়ি কারখানায়। সেখান থেকে স্পুষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কাজে আসার প্রয়োজন নেই। ফল দাঁড়িয়েছে, দিন আনি দিন খাই গ্রামের অধিকাংশের বাড়িতেই এখন উনুনে আঁচ পড়ছে না।

সুতি ২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমিত্র শাসমল বলেন, “নিজের বিপদ মানুষ নিজেই ডেকে আনেন। কোভিড হাসপাতাল থেকে বারংবার বলে দেওয়া হয়েছিল মৃতদেহের দেহ থেকে পলিথিনের আচ্ছাদন না-খোলার কথা। কিন্তু সে নিষেধের ধার ধারেননি মৃতের পরিবার। উপসর্গ দেখা দিতেও দেরি হয়নি। ধুলিয়ানের তারাপুর হাসপাতালে পরীক্ষা করাতেই একের পর এক কোভিড ধরা পড়তে থাকে। ইতিমধ্যেই ১৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ হয়েছে।’’

আনলক পর্বে প্রায় বন্ধ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুন্দরলাল দাস বলছেন, “সচেতনতার অভাবের খেসারত দিয়ে চলেছি আমরা। গ্রামে কিছুই মিলছে না। আর গ্রামের বাইরে আমরা ব্রাত্য! বাড়িতে দশ জন লোক। কিন্তু চাল-আলু-আনাজ কিছুই নেই।” পার্শ্ব শিক্ষক বিশ্বজিত দাস বলছেন, “গ্রামের অনেকেই বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। কিন্তু কাজ পেলে তবে তো আয়! আচমকা কাজ হারিয়ে পেট ভরবে কী করে!” স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ওয়াজেদ আলি বলেন, “দাহ করার সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে পঞ্চায়েতের কাজ করতে আপাতত বারণ করা হয়েছে।’’ সুতির বিডিও সৌভিক ঘোষ বলছেন, “ওই গ্রামের মানুষ সচেতন নন ঠিকই। তা বলে সেখানকার সব বাসিন্দাকে বয়কট করার কোনও মানে হয় না। আমরা দ্রুত অবস্থা স্বাভাবিক করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE