Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘরের নীচে সেনার জমি, চিন্তায় ওঁরা

সরকারি চাকুরে বটে। কিন্তু মনে শান্তি নেই। কারণ এখনও পর্যন্ত তাঁর বাস্তুভিটের কোনও সরকারি কাগজ বা পাট্টা পাননি। মনের মধ্যে কেবলই একটা ভয় তাড়া করে বেড়ায়— এই বুঝি ভিটে থেকে তুলে দেওয়া হল।  আবার বুঝি ছিন্নমূল হতে হয়!

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

ছিন্নমূল হয়ে পূর্ববঙ্গের গোপালগঞ্জ থেকে চলে এসেছিলেন কালীপদ দে। ১৯৫৬ সালে। আশ্রয় নিয়েছিলেন ধুবুলিয়ার রেলবাজার কলোনিতে। সেখানে এখন থাকেন তাঁর ছেলে শঙ্করচন্দ্র দে। তিনি জেলা প্রশাসনিক ভবনে উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের কর্মী।

সরকারি চাকুরে বটে। কিন্তু মনে শান্তি নেই। কারণ এখনও পর্যন্ত তাঁর বাস্তুভিটের কোনও সরকারি কাগজ বা পাট্টা পাননি। মনের মধ্যে কেবলই একটা ভয় তাড়া করে বেড়ায়— এই বুঝি ভিটে থেকে তুলে দেওয়া হল। আবার বুঝি ছিন্নমূল হতে হয়!

এই ভয় কি শুধু তাঁর একার?

ধুবুলিয়ার রেলবাজার, আমবাগান কলোনির মত উদ্বাস্তু-প্রধান এলাকার শ’য়ে শ’য়ে পরিবার এক দিনের জন্যও স্বস্তিতে থাকতে পারেন না। তাদের জমি যে সেনার নামে! অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তি।

বুধবার রানাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের জমিতে থাকা অনুমোদনহীন উদ্বাস্তু কলোনিগুলিকে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ আগে হোক আর পরে, ওই সব কলোনিতে বসবাসকারী পরিবারগুলি জমির পাট্টা পেয়ে যাবে।

এই খবর পাওয়া ইস্তক মনটা যেন আরও ভেঙে গিয়েছে শঙ্করদের। তাঁরা রয়েছেন কেন্দ্রের জমিতে। তা হলে বাস্তুভিটের সরকারি স্বীকৃতি কি আর কোনও দিন জুটবে না? শঙ্কর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর মতো যদি প্রধানমন্ত্রীও একটু আমাদের কথাটা ভাবতেন! আমি না হয় সরাকারি চাকরি করি। কিন্তু এমন প্রচুর মানুষ আছেন, যাঁরা অত্যন্ত দরিদ্র। নিজের নামে জমি না থাকায় তারা সরকারি ঘরটুকুও পাচ্ছেন না।”

বিষয়টি জানেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা সেই মতো রিপোর্টও পাঠিয়েছেন রাজ্য সরকারের কাছে, যাতে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে উদ্বাস্তু কলোনির অনুমোদনের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু সেই সম্ভাবনা যে তেমন জোরালো নয়, তা পরিষ্কার মু্খ্যমন্ত্রীর কথাতেই। প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেই দিয়েছেন যে কেন্দ্র এ নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। তাই কেন্দ্রের জমি বাদ দিয়ে রাজ্যের জমিতে থাকা উদ্বাস্তু কলোনিগুলির অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, অনুমোদনহীন উদ্বাস্তু কলোনির খোঁজ করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত যা সন্ধান মিলেছে, তাতে শুধু ধুবুলিয়াতেই আছে ৩১টি কলোনি। সেখানকার প্রায় সাড়ে ছ’শো একর জমি আছে সেনাবাহিনীর নামে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “আমরা সেনার এই সব জমি চিহ্নিত করে রাজ্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

নদিয়ায় এখনও পর্যন্ত ১১৮টি অনুমোদিত উদ্বাস্তু কলোনি আছে। তার বাইরে অনেক আগে তৈরি হওয়া অনুমোদনহীন কলোনির সংখ্যা প্রায় দেড়শোটি। ডিসেম্বর মাসে রাজ্য থেকে অনুমোদনহীন কলোনিগুলির তালিকা ও তার বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়। তার পরেই শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত ১২৬টি কলোনিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তার মধ্যে ১৫টি আছে রাজ্য সরকারের জমিতে। সেগুলির তালিকা করে পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। আর শুধু ধুবুলিয়াতেই ৩১টি কলোনি চিহ্নিত করা গিয়েছে যেগুলি রয়েছে সেনার জমিতে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “বাকি কলোনিগুলির জমির নথি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, সেগুলি ঠিক কী অবস্থায় আছে। কোনটা কেন্দ্রীয় সরকারের আর কোনটা রাজ্য সরকারের জমিতে আছে। সেই মতো তালিকা করে আবারও অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।”

রাজ্য সরকারের অনুমোদনের জন্য চিহ্নিত ১৫টি কলোনির বাইরেও বেশ কিছু কলোনিকে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব বাকি থাকা কলোনিগুলির নামও অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।”

অনুমোদনের অপেক্ষায়


• নবদ্বীপ ব্লকের লেনিন-২ কলোনি
• হাঁসখালির শ্রীকৃষ্ণ কলোনি
• শান্তিপুরের ৩ নম্বর গেট রামচন্দ্র গোস্বামী রোড, চৈতন্য পল্লি, নেতাজি সুভাষ পল্লি, শান্তিগড়-১ ও শান্তিগড়-২
• রানাঘাটের শ্যামাপল্লি
• গয়েশপুর পুরসভার রবীন্দ্রপল্লি, n কল্যাণী এনএসএস-এর রবীন্দ্রপল্লি গয়েশপুর
• গয়েশপুরের ভূপেন লোধ নগর এনএসএস
• এ কে গোপালনগর এমএনসিপি ১৮ নম্বর ওয়ার্ড
• সগুনা সুভাষনগর কলোনি-পল্লি উন্নয়ন সমিতি ও লিচুতলা উদ্বাস্তু পল্লি-উন্নয়ন সমিতি ১ নম্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE