টিএমসিপি-র দাপটে জেলার বেশির ভাগ কলেজে তাদের ঢোকার সাধ্য নেই। এখন গ্রামে-গ্রামে গিয়ে সদস্য বাড়াচ্ছে এসএফআই। যদিও কলেজের রাজনীতি বা রাস্তায় মিটিং-মিছিলে যদি তাদের দেখা না যায়, তবে খাতায়-কলমে সদস্য বেড়ে কী হবে, সেই প্রশ্নও রয়েছে।
২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সিপিএম অনুগামী ছাত্র সংগঠনও। কলেজে-কলেজে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তাদের কলেজে ঢুকতে দিচ্ছে না, মেরে বার করে দিচ্ছে বলেও এসএফআই বারবার অভিযোগ করেছে। বিগত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কোনও কলেজেই তারা সে ভাবে প্রার্থী দিতে পারেনি।
এসএফআই নেতাদের দাবি, এই পরিস্থিতিতেই তারা সংগঠন বাড়াতে কলেজে ক্যাম্পাস ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রামে-গ্রামে গিয়ে নেতারা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার পরেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার কথা পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরছেন সদস্যেরা। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে অনেক পড়ুয়াই তাদের সংগঠনের ছাতার তলায় আসতে শুরু করেছেন।
এসএফআই-এর খাতা বলছে, বাম সরকারের পতনের পরে ২০১১-১২ বর্ষে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়েছিল। সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার থেকে এক ধাক্কায় নেমে আসে প্রায় ২৬ হাজারে। মুষ্টিমেয় কয়েক জন ছাড়া সক্রিয় সদস্য বলতে গেলে ছিলই না। সংগঠনের নেতাদের দাবি, ২০১৫ সালের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। ২০১৫-১৬ বর্ষে সদস্য সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়ায়। তার পরের বছর আরও হাজারখানেক। গত বছর ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এ বার ইকিমধ্যে ৩১ হাজার সদস্য হয়ে গিয়েছে। আগামী ৩১ মার্চে বছর শেষ হওয়ার আগেই সংখ্যাটা ৫০ হাজার ছোঁবে বলে আশা জেলা নেতৃত্বের। অর্থাৎ বাম জমানার সমান!
এসএফআই যেখানে কলেজেই ঢুকতে পারছে না, কোন জাদুতে তাদের সদস্য বাড়ছে?
এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক শান্তনু সিংহের মতে, এর কারণ ২০১৩ থেকে কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে তাঁদের গ্রামে-গ্রামে যাওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সময় থেকেই শুরু হয় আমাদের ‘স্কুল দিয়ে কলেজ ঘেরো’ কর্মসূচি।’’ শান্তনুর দাবি, শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা, টাকা দিয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা, টিএমসিপি নেতাদের তোলাবাজিতে বিরক্ত হয়েই পড়ুয়ারা তাঁদের সঙ্গে আসতে চাইছেন।
কিন্তু এত যে সদস্য, তাদের কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন? তারা কি সত্যিই শেষ পর্যন্ত লড়াই-সংগ্রামে থাকবে? রাস্তায় ঝান্ডা হাতে দেখা যাবে তাদের? যারা গ্রামে বসে এসএফআই-এর সদস্য হচ্ছে, তারাই আবার কলেজে গিয়ে টিএমসিপি করছে না তো? শান্তনুর দাবি, “সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আমরা সারা দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে পড়ুয়াদের বুঝিয়ে আড়াইশো থেকে তিনশোর বেশি সদস্য করতে পারছি না। যদি দু’টাকার বিনিময়ে সদস্য করা লক্ষ্য হত, সংখ্যাটা অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলা যেত।”
যদিও এসএফআই-এর হিসেব প্রায় তুড়ি মেরে উ়ড়িয়ে দিচ্ছেন টিএমসিপি নেতারা। সংগঠনের জেলা সভাপতি সৌরিক মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “এই হিসেবটা কি সারা ভারতের? যদি তা না হয়ে থাকে, তা হলে বলতে হবে যে ওরা সংখ্যাটা স্বপ্নে দেখছে।”
আরএসএস অনুগামী ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র জেলা প্রমুখ আশিস বিশ্বাসের দাবি, “আমাদের সদস্য প্রায় পাঁচ হাজার। ওদের মতো দু’টাকার কুপন কেটে সদস্য করলে এখনই ৫০ হাজার করে ফেলতে পারি।” সৌরিকের চ্যালেঞ্জ, “যদি সত্যিই ওদের অত সদস্য থেকে থাকে, অন্তত হাজার তিনেক ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটা মিছিল বা জমায়েত করে দেখাক। তা হলে বুঝব! কোথাও অস্তিত্ব নেই, খালি গল্প দিচ্ছে!”
শান্তনুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমরা তো বিরিয়ানি খাইয়ে লোক জড়ো করি না। অপেক্ষা করুন, েদখতে পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy