Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coronavirus Lockdown

নির্দেশ যেন আসমান থেকে বৃষ্টি

কেউ মাঝপথেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। আর কেউ বা বাস-ট্রেনের সরকারি আনুকূল্য পেয়েছেন বটে তবে নগদ টাকায় গুনে দিতে হয়েছে টিকিটের দাম।

 —ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০০:৫০
Share: Save:

খবর কাগজে দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশটা পড়ে চোখে জল এসে গেল সাখিরুদ্দিন আহমেদের। দুধের গাড়ি, বাসের ছাদ, টোম্যাটো বোঝাই ট্রাক কিংবা মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে পাঁচ দিনের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা বুকে বেঁধে তেলঙ্গানা থেকে শেষতক গ্রামে পৌঁছিয়েছেন সাখিরুদ্দিন। বলছেন, ‘‘আমরা তো এই সামান্য কথাটাই বার বার বলতে চেয়েছিলাম, যে বাপু যেখানে আছি সেখানেই থাকব, শুধু বন্দিদশায় খাবারটুকু যেন পাই। সে কথা না শুনে আমাদের খেদিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে তারা। আরে বাবা, আমরা কি করোনা রোগটা কাঁধে বয়ে এনেছি!’’

খিদে আঁকড়েই তাই মরিয়া হয়ে তাঁদের গ্রামে ফেরা। ফেরার সেই পথটা কখনও পুলিশের অনুশাসন কখনও বা একের পর এক ভিন রাজ্যে ফুঁড়ে আসার মাঝে অকথ্য মনে-শরীরে আঘাত নিয়ে পৌঁছেছেন কেউ। কেউ মাঝপথেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। আর কেউ বা বাস-ট্রেনের সরকারি আনুকূল্য পেয়েছেন বটে তবে নগদ টাকায় গুনে দিতে হয়েছে টিকিটের দাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় ছিল— পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্ন-পানীয়ের সংস্থান করতে হবে যে রাজ্যে তাঁরা আটকে রয়েছেন, তাদের। ট্রেনে-বাসে ভাড়া নেওয়া চলবে না। এমনকি সড়ক বা রেলপথে ফেরার সময়ে তাদের খাবার বা জলের ব্যবস্থাও করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে। ক্ষতবিক্ষত অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রামের ঠিকানায় ফিরে এখন তাঁদের অনেকেরই আক্ষেপ, এই নির্দেশটা আগে পেলে জীবনটা এমন ‘আধমরা’ হয়ে যেত না তাঁদের।

সেই তেঁতো অভিজ্ঞতার কথাই বলছিলেন ডোমকলের কুপিলা গ্রামের শহিদুল ইসলাম। নির্মাণ শ্রমিকের কাজে ছিলেন কেরলে। সেখান থেকে ফেরার পথে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন বিলাসপুর স্টেশনে। তার কথায়, ‘‘আটকে পড়ে মনে হচ্ছিল, আমরা যেন ভিন গ্রহ থেকে এসেছি। একবার স্টেশন থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, আবার বাইরে গেলে সেখানেও সাধারন মানুষ বলছে আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। শেষে নিজের সামান্য জমানে পয়সা দিয়ে বাস ভাড়া করে ঘরে ফিরেছি।’’ পমাইপুর গ্রামের তনভির আহমেদ বলছেন, ‘‘আমরা গুজরাতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতাম, লকডাউনের পরে স্রেফ খিদে-তেষ্টায় কর্মস্থল ছেড়েছিলাম। শেষপর্যন্ত বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করে পাঠানো আড়াই লক্ষ টাকায় বাস ভাড়া করে ঘরে ফিরেছি। আদালতের এই নির্দেশ যেন আসমান থেকে বৃষ্টি নামাল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Migrant Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE