Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Milk Union

ডেয়ারির টাকা অমিল, সঙ্কটে মিল্ক ইউনিয়ন

ইউনিয়ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন অন্তত কুড়ি হাজার লিটার দুধ পাঠানো হয় বেলগাছিয়ার সেন্ট্রাল ডেয়ারি ও মাদার ডেয়ারিতে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৬
Share: Save:

প্রশাসনিক জটিলতায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনও টাকা পাচ্ছে না কিসান মিল্ক ইউনিয়ন। ইউনিয়ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন অন্তত কুড়ি হাজার লিটার দুধ পাঠানো হয় বেলগাছিয়ার সেন্ট্রাল ডেয়ারি ও মাদার ডেয়ারিতে। কিন্তু সরকারি ওই দুই সংস্থা বহু দিন ধরে তাদের অন্তত দু’কোটি টাকার বিল মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে সমিতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা দুধের দর মেটাতে পারছে না ওই মিল্ক ইউনিয়ন।

নদিয়া জেলায় প্রায় ১৮০টি দুগ্ধ সমবায় সমিতি রয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত হাজার চাষি ওই সমিতিগুলির মাধ্যমে সরকারি সংস্থা কিসান মিল্ক ইউনিয়নকে দুধ সরবরাহ করেন। এমনিই গোয়ালাদের বদলে কিসানকে দুধ দিলে দর কম মেলে বলে চাষিরা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেন। তা সত্ত্বেও কখনও বিনামূল্যে, কখনও ভর্তুকিতে দুধ দোয়ানোর সরঞ্জাম, গোখাদ্য এমনকি গাভীর বিমার সুবিধা মেলে বলে হাজার-হাজার চাষি সমিতি তৈরি করে কিসানকে দুধ দেন।

ধুবুলিয়ার গোপালক সঞ্জীব মণ্ডল বলছেন, ‘‘কিসানে দুধ দিলে ফ্যাটের পরিমাণ বিচার করে দর মেলে। তবুও সরকারি সংস্থা বলে আমরা কিসানকে দুধ দিই।’’ কিন্তু চাষিদের আক্ষেপ, মাসখানেক ধরে তাঁরা কোনও টাকাই পাচ্ছেন না। মিল্ক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহেই মাদার ডেয়ারি ও সেন্ট্রাল ডেয়ারিতে যে পরিমাণ দুধ দেওয়া হয়, তার টাকা ওই দুই সংস্থা পাঠিয়ে দেয়। আর সেই মতো প্রতি ১০ দিন অন্তর চাষিদের দুধের দাম মেটানো হয়। মাসে তিন বার ওই টাকা চাষিদের দেওয়া হয়। এর জন্য প্রতি ১০ দিনে কিসান মিল্ক ইউনিয়ন প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা করে চাষিদের দেয়। কিন্তু মাস খানেক ধরেই চাষিরা ওই টাকা পাচ্ছেন না।

ইউনিয়ন সূত্রের অভিযোগ, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে মাদার ডেয়ারি কোনও টাকায় পাঠায়নি কিসানকে। সেন্ট্রাল ডেয়ারির টাকাও মিলছে না গত ১১ ডিসেম্বর থেকে। বাধ্য হয়ে এখনও প্রতি দিনই দুই সংস্থাকে দুধ পাঠাতে হচ্ছে। ফলে প্রাপ্য টাকার পরিমাণ দিন-দিন লাফিয়ে বাড়ছে। কিসান মিল্ক ইউনিয়নের এক পদস্থ কর্তা জানান, কিসান কখনও বেসরকারি ডেয়ারিকে দুধ বিক্রি করতে পারে না। এক মাত্র সরকারি সংস্থাকেই দুধ দিতে হয়। ফলে অন্তত দু’কোটি টাকা বকেয়া থাকা সত্ত্বেও ওই দুই সংস্থাকে নিয়মিত দুধ সরবরাহ করতে হচ্ছে। কিন্তু টাকা না পেয়ে অনেক চাষিই এখন দুধ দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

দুগ্ধ চাষিরা জানাচ্ছেন, এমনটা চললে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। কারণ, গাভী প্রসব করার কয়েক মাস আগেই গোয়ালারা চাষিদের থেকে দুধ নেওয়ার শর্তে অগ্রিম টাকা দিয়ে দেন। সেই টাকা শোধ হতে না হতেই চাষিরা চাইলেই ফের টাকা দেন গোয়ালারা। ফলে দেখা যায়, চাষিরা সব সময়ে অগ্রিম টাকা পান গোয়ালাদের কাছ থেকে। আবার দুধও সংগ্রহ করেন গোয়ালারা। মাসের পর মাস টাকা না পেলে কোনও চাষিই দুধ দিতে চাইবেন না।

কিসান মিল্ক ইউনিয়নের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উৎসব চট্টোপাধ্যায় জানান, মাদার ডেয়ারি সপ্তাহান্তে দুধের পরিমাণ দেখে দর মিটিয়ে দেয়। এর জন্য বিলও জমা দিতে হয় না। কিন্তু এক মাস হয়ে গেলেও কোনও টাকা আসেনি। ফলে সমস্যা হচ্ছে। দুধ বিক্রির টাকাতেই কর্মীদের মাসিক বেতন হয়। টাকা না মেলায় জানুয়ারি মাসের বেতন কর্মীরা এখনও পাননি বলেও তিনি জানান। কিসানের এক পদস্থ কর্তা আবার বলেন, ‘‘মিল্ক ইউনিয়নগুলির নিয়ামক সংস্থা মিল্ক ফেডারেশনও বিষয়টি নিয়ে অবগত। আশা করা সমস্যা দ্রুত মিলবে।’’

কবে জট কাটে, আপাতত সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milk Union Mother Dairy Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE