Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল ছেড়ে পদ্মের পথে

লোকসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে আগেই। এ বার রানাঘাট মহকুমাতেও তার ছাপ পড়তে চলেছে। 

তৃণমূল থেকে বিজেপির পথে।

তৃণমূল থেকে বিজেপির পথে।

সম্রাট চন্দ
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

লোকসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে আগেই। এ বার রানাঘাট মহকুমাতেও তার ছাপ পড়তে চলেছে।

বিজেপি সূত্রের দাবি, রানাঘাট ১ ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ সরকার-সহ বেশ কিছু জনপ্রতিনিধি তাদের দলে যোগ দিতে চলেছেন। প্রদীপও জানান, আজ, বৃহস্পতিবার রানাঘাটে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।
রানাঘাট লোকসভা হাতছাড়া হলেও এখনও নদিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সে ভাবে বড়সড় ভাঙনের মুখে পড়তে হয়নি তৃণমূলকে। তবে সামলানো শক্ত হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের দাবি, আজ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা দফতরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে রানাঘাট শহর লাগোয়া রানাঘাট ১ ব্লকের বেশ কিছু তৃণমূল নেতাকর্মী দল বদলাতে চলেছেন। প্রদীপ ছাড়াও স্থানীয় কিছু পঞ্চায়েত সদস্যও এর মধ্যে রয়েছেন বলে খবর।
২০০৭ সাল থেকে কয়েক দফায় প্রায় বছর সাতেক রানাঘাট ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ছিলেন প্রদীপ ওরফে কাজু। ২০১৭ সাল নাগাদ তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দল ছাড়ার মুখে দাঁড়িয়ে প্রদীপ অবশ্য তোপ দেগেছেন রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির চার বারের সভাপতি তৃণমূলের তাপস ঘোষের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, “রানাঘাট ১ ব্লকে দুর্নীতি, তোলাবাজি, ঠিকাদারিরাজ চলছে। তা মানতে না পারায় আমাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল।”
প্রদীপের দাবি, “২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাপস ঘোষেরাই অন্তর্ঘাত করে দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” তাপসের পাল্টা দাবি, “উনি পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছেন। এখন দল ছাড়ার আগে অজুহাত দেখাচ্ছেন। কারা তোলাবাজি করে, তা মানুষ জানে।” তিনি আরও বলেন, “আমি চার বারের সভাপতি। মানুষ ভরসা রেখেছে বলেই তো জিতেছি। ওঁরা যে লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থীকে হারিয়েছেন তা নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট। কাজেই তাঁর আর বিজেপিতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
এক সময়ে তাপস ঘোষেরই ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রদীপ। পরে নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয়। ক্রমশ তিনি রানাঘাট উত্তর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় এবং রানাঘাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যসভার সাংসদ আবীর বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন প্রদীপ। তাপসেরা তাঁদের বিরোধী গোষ্ঠী।
কয়েক বছরে মিউজিক্যাল চেয়ারের মত কখনও তাপস, কখনও প্রদীপ বসেছেন দলের ব্লক সভাপতির চেয়ারে। তবে ২০১১ থেকে পাঁচ বছর আবীর আর পার্থসারথী বিধায়ক থাকার সময়ে রানাঘাট ১ ব্লকে দলের মধ্যে কিছুটা হলেও আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করেন প্রদীপ। কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে দল হেরে যাওয়ার পর থেকেই কোণঠাসা হতে থাকেন তিনি। এক সময়ে তাঁকে সরিয়ে ফের ব্লক সভাপতি করা হয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষকে। দলে রানাঘাট উত্তর পশ্চিমের বিধায়ক শঙ্কর সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস। দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও এখন শঙ্করই। প্রদীপের বিজেপির দিকে পা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমার কাছে এখনও কোনও খবর নেই।’’
রানাঘাট ১ ব্লকের পাশাপাশি হাঁসখালি ব্লকের বেশ কিছু বর্ষীয়ান নেতাও সম্প্রতি ঝুঁকেছিলেন বিজেপির দিকে। এঁদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন দলের নানা পদে ছিলেন। সম্প্রতি তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার তাঁদেরও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কানাঘুষো ছিল। তবে তৃণমূল তা আপাতত আটকাতে পেরেছে।
রানাঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, “তৃণমূল থেকে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, তাঁদেরই আমরা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE