Advertisement
০৫ মে ২০২৪

‘যেখানে দরকার, পাঁচন দেবে’, নদিয়ায় পা রেখেই বার্তা অনুব্রতের

তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত নদিয়ার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা তো বললেনই, সেই সঙ্গে দাবি করলেন, প্রতিটি বিধানসভা এলাকা থেকে অন্তত ৩০ হাজার ভোটের লিড দেবেন।

তৃণমূলের কর্মিসভায় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলছেন বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। ছবি: প্রণব দেবনাথ

তৃণমূলের কর্মিসভায় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলছেন বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সুস্মিত হালদার
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের ঘোড়দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে। নদিয়ায় তৃণমূলের ঘর গোছাতে নেমেই পড়লেন বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল।

গত ৯ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে গিয়ছিলেন, অনুব্রত গোটা জেলা ঘুরে সংগঠনের হালচাল দেখবেন। দরকার মতো ব্যবস্থা নেবেন। সোমবার তেহট্ট দিয়ে তারই সূচনা হল। বেতাই দক্ষিণ জিতপুরে আমবাগানে মঞ্চ করে কর্মিসভার আয়োজন হয়েছিল।

তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত নদিয়ার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা তো বললেনই, সেই সঙ্গে দাবি করলেন, প্রতিটি বিধানসভা এলাকা থেকে অন্তত ৩০ হাজার ভোটের লিড দেবেন। স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে ‘পাঁচনের বাড়ি’ দেওয়ার কথাও বাদ গেল না। তবে তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, বুথ স্তর থেকে কোথায় কী ফাঁকফোকর আছে তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করা।

এ দিন সভায় চাঁদেরঘাটের অঞ্চল সভাপতি অভিযোগ করেন, “ব্লক স্তর থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয় না। মিটিংই হয় না।” মঞ্চে তখন বসে দলের তেহট্ট-১ ব্লক সভাপতি বিশ্বরূপ রায়। তাঁর হাতেও মাইক। আমতা আমতা করে তিনি জবাব দিলেন, “সেভাবে মিটিং ডাকা হয়ে ওঠেনি। আসলে বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা করেই সবটা করা হয়।”

আরও পড়ুন: ছবি আঁকার হাত হেলায় কাটত গলাও

খানিকটা ধমকের সুরেই অনুব্রত বলেন, “কেন মিটিং ডাকবেন না? বিধায়ক থাকবেন বিধায়কের মতো, সংগঠন চলবে সংগঠনের মতো। মিটিং না করলে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করলে বুঝবেন কী করে কোথায় কী সমস্যা আছে? কী করে তার সমাধান হবে?” তাঁর পাশেই বসেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তাঁর হাতে মাইক দিয়ে দিয়ে অনুব্রত বলেন, “গৌরীদা, ব্লক সভাপতিদের বলে দিন মাসে যেন এক বার করে বৈঠক করে। আর তার লিখিত সিদ্ধান্ত যেন আপনাকে পাঠিয়ে দেয়।” গৌরীশঙ্কর তেমনই নির্দেশ দেন।

একে-এক ব্লক, অঞ্চল ও বুথ সভাপতিদের দাঁড় করিয়ে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে নানা প্রশ্ন করেন অনুব্রত। বেশি জোর দেন বুথ, অঞ্চল ও ব্লক স্তরে নিয়মিত বৈঠক করা এবং তার লিকিত সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি উচ্চতর নেতৃত্বের কাছে পাঠানোর ব্যাপারে। বিশেষ করে জানতে চান, বুথ সদস্যেরা নিয়মিত পাড়ায় ঘোরেন কি না, কোন অঞ্চলে ক’টা বুথ, কোন কোন বুথে তৃণমূল হেরেছে, কেন হেরেছে, সেই সব বুথে জেতার জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রশ্নের ধরনই বলে দিচ্ছিল, তৃণমূল স্তরে সংগঠন কী অবস্থায় আছে, তা তিনি বুঝে নিতে চাইছেন।

প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীনই এক অঞ্চল সভাপতি অভিযোগ করেন, নিয়মিত বৈঠক করে তার লিখিত সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি ব্লক সভাপতির কাছে পাঠানোর কথা কেউ তাঁদের বলেননি। তা শুনে গৌরী দত্তের দিকে তাকিয়ে অনুব্রত বলেন, “ওদের দোষ নয়। ওদের বলা হয়নি।”

ধনঞ্জয়পুরের অঞ্চল সভাপতি অভিযোগ করেন, তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তাঁরা বোর্ড গঠন করতে পারেননি। কারণ, আগের সভাপতি নিজের স্ত্রীকে প্রধান করবেন বলে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন করেছেন। এবং তা ঠেকাতে নেতৃত্বের তেমন কোনও উদ্যোগও ছিল না। অনুব্রত তাঁদের আশ্বস্ত করেন, বোর্ড তৃণমূলই গঠন করবে। ওই অঞ্চলের কয়েক জন নেতাকে পরে ডেকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলবেন বলেও তিনি জানিয়ে দেন।

এক অঞ্চল সভাপতির কাছে অনুব্রত জানতে চান, ঠিকাদারদের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেন কি না। কারও কাছে জানতে চান, হারার পরে রাতে ঘুমোতে পারেন কি না। সেই সঙ্গেই বারবার জানতে চান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের এত উন্নতি করার পরও বিজেপি কী ভাবে জিতল? এক অঞ্চল সভাপতিকে পরিষ্কার বলে দেন, “এক মাস পরে আবার আসব। তখনও যদি সব কিছু ঠিকঠাক মতো না হয় তা হলে সরিয়ে দেওয়া হবে।”

বৈঠক শেষে অনুব্রত অবশ্য বলেন, “নদিয়ার কর্মীরা খুব ভাল। বুথ সভাপতি, অঞ্চল সভাপতিরাও খুব ভাল। যদি কিছু ভুল থাকে, সেটা আমাদের আছে।’’ তাঁর মতে, কিছুটা সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া সিপিএম ও বিজেপি জোট করায় কিছু পঞ্চায়েত তাঁরা হারিয়েছেন। অনুব্রতর মতে, “দু’এক জায়গায় চেন সিস্টেমে ভুল আছে। এক মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কোনও বিধানসভা এলাকা থেকে তিরিশের নীচে কোনও লিড হবে না। চ্যালেঞ্জ করে গেলাম!” আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তাঁরা তেহট্টে যে জনসভা করবেন, সেখানে আড়াই থেকে তিন লক্ষ লোক হবে বলেও তিনি দাবি করেন।

আর কর্মীদের উদ্দেশে অনুব্রতর বার্তা, “পাঁচন যেখানে দরকার, পাচন দেবে। পাচন ছাড়া ভাল জমিতে চাষ হয় না। কোথাও যদি শক্ত জমি থাকে, সেখানে পাঁচনের বাড়ি দেবে, তো কী হয়েছে! বিজেপির দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই আমাদের সামনে।”

নদিয়াতেও এ বার তবে পাঁচন-সংস্কৃতি শুরু হল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal Nadia TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE