Advertisement
০৪ মে ২০২৪

শাসাচ্ছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন, মেয়ে নিয়ে পড়শিদের ভরসায় লালবাগের পাপিয়া

পড়শিদের দেওয়া খাবারই ভরসা লালবাগের এলাহিগঞ্জের পাপিয়া সুলতানার। শনিবার দুপুর থেকে পড়শিরা পাপিয়া ও তাঁর আড়াই বছরের মেয়েকে খাবার দিচ্ছেন। সেই খাবার খেয়েই তাঁদের দিন কাটছে।

অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই লালবাগের পাপিয়া সুলতানার। নিজস্ব চিত্র

অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই লালবাগের পাপিয়া সুলতানার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
Share: Save:

পড়শিদের দেওয়া খাবারই ভরসা লালবাগের এলাহিগঞ্জের পাপিয়া সুলতানার। শনিবার দুপুর থেকে পড়শিরা পাপিয়া ও তাঁর আড়াই বছরের মেয়েকে খাবার দিচ্ছেন। সেই খাবার খেয়েই তাঁদের দিন কাটছে। রবিবারেও পাপিয়া বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়শিদের শাসাচ্ছে। প্রতিবেশীরা গোপনে আমাদের খাবার দিচ্ছেন। আর সেই খাবার খেয়েই দিন চলছে।’’

পাপিয়ার অভিযোগ, কন্যাসন্তান হওয়ায় দাবি মতো পণ দিতে না পারায় বৃহস্পতিবার তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেন পাপিয়ার স্বামী মাইনুল ইসলাম। এক পড়শির বাড়িতে দু’দিন কাটিয়ে শনিবার সকালে শ্বশুরবাড়ি ফিরে দেখেন, বাড়িতে তালা ঝুলছে। সদর দরজার সামনে মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসেছিলেন তিনি। পরে পড়শিদের কাছ থেকে হাতুড়ি নিয়ে তালা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে তালা ভেঙে একটি ঘরে থাকছেন।

পাপিয়ার অভিযোগ, মাইনুল তৃণমূল কর্মী। মাইনুলের কাকিমা পপি বিবি মুর্শিদাবাদ জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। সেই কারণে তাঁরা এত সাহস পাচ্ছেন। পাড়ার লোকজন যাঁরা পাপিয়াকে সাহায্য করছেন, তাঁদের পপি ও মাইনুল নানা ভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না বলে বাড়িতে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।

মুর্শিদাবাদ জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পপি বিবি, তাঁর স্বামী নূরমাল শেখ এমন অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা কাউকে ভয় দেখাইনি। একটি পারিবারিক বিষয়কে রং চড়ানো হচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে আগে মামলা হয়েছে। ফলে আইন আইনের পথে চলবে। পাপিয়ার স্বামী মাইনুলকে এর আগে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। এ দিন মাইনুল ইসলাম ফোনে দাবি করেছেন, ‘‘পাপিয়া মিথ্যা কথা বলছেন। পণ বাবদ কোনও টাকা আমি নিইনি। বরং আমাকে চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার শাশুড়ি আড়াই লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা শাশুড়ি এখনও ফেরত দেননি।’’ মাইনুলের দাবি, ‘‘বিয়ের পর থেকে পাপিয়া আমার সঙ্গে সংসার করতে চাইতও না। আড়াই বছর আগে আমাদের না জানিয়ে পাপিয়া বাবার বাড়ি চলে যায়। বার বার আনতে গেলেও আসেনি। আবার আমাদের না জানিয়ে হঠাৎ আমার বাড়ি চলে এসেছে। পাপিয়া তো আমাদের নামে বধূ নির্যাতনের মামলাও করেছে। সেই মামলায় আদালত যে রায় দেবে মাথা পেতে নেব। মেয়ে হওয়ায় টাকা চাওয়ার কথাও ঠিক নয়।’’

অন্য দিকে, পাপিয়ার দাবি, ‘‘মাইনুলের অন্য এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পারি। এ ছাড়া মেয়ে হওয়ায় অতিরিক্ত পণের দাবি করে। এই দুই কারণে, আমার উপরে অত্যাচার শুরু করেছিল। তাই বাবার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছিলাম।’’

পাপিয়ার দাবি, ‘‘মাস দেড়েক আগে জানতে পারি আমার স্বামী লালগোলা এলাকায় বিয়ে করছেন। বিয়ের দিন সেই বিয়ে বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে সেই বিয়ে ভেঙে দিই। তার পরে অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। তবে আমিও এর শেষ দেখতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Neighbours Berhampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE