Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ডাব সরিয়ে দেব-পাতে এখন পিঠেপুলি

ধামেশ্বর মহাপ্রভুকে শীতের রাতে কড়াইশুটির কচুরি আর আলুরদম দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। বলদেব মন্দিরে নৈশভোগ সাজানো থাকে আলুর পরোটা ও চানামশলা।

বিগ্রহকে খেতে দেওয়ার প্রস্তুতি। নবদ্বীপের একটি মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

বিগ্রহকে খেতে দেওয়ার প্রস্তুতি। নবদ্বীপের একটি মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

শীতের শিরশিরে হাওয়ায় আমলকির ডালে এখনও তেমন নাচন লাগেনি। কিন্তু নলেন গুড়ের পায়েস, নতুন চালের খিচুড়ি, কড়াইশুটির কচুরি, পিঠেপুলি হাজির নবদ্বীপের বৈষ্ণব মঠ-মন্দিরের ভোগে। প্রচলিত প্রথা মেনে অঘ্রান পয়লা থেকেই বিভিন্ন মন্দিরে শুরু হয় নবান্ন। বদলে যেতে থাকে সকাল-দুপুর-রাতের ভোগ।

ধামেশ্বর মহাপ্রভুকে শীতের রাতে কড়াইশুটির কচুরি আর আলুরদম দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। বলদেব মন্দিরে নৈশভোগ সাজানো থাকে আলুর পরোটা ও চানামশলা। ও দিকে আবার প্রাচীন মায়াপুরে চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমে সকাল সাতটার মধ্যে সোনামুগের ডাল, সুগন্ধী গোবিন্দভোগ চালের সঙ্গে কিসমিস, কাজু ও পর্যাপ্ত পরিমাণে মিষ্টি দিয়ে তৈরি ঘি চপচপে ভুনা খিচুরি। সঙ্গে আলু, কপি, পাঁপড় ভাজা দিয়ে বাল্যভোগ। হরিসভা মন্দিরের নাটুয়া গৌরের শীতের মধ্যাহ্ন ভোগে দেওয়া হয় পালংয়ের শিস দিয়ে চচ্চড়ি, টম্যাটোর চাটনি, কপি-বেগুন-মুলো দিয়ে তরকারি, দই কপি, পালং পনির, খেজুর গুড়ের পায়েস, নলেন গুড়ের কড়াপাকের কাঁচাগোল্লা।

হরিসভা মন্দিরের প্রধান বিবেকবন্ধু ব্রহ্মচারী জানান, ঠাকুরবাড়ির ভোগ বলতে যাঁরা শুধুই খিচুড়ি-পায়েস-মালপোয়া বোঝেন, তাঁদের জানিয়ে রাখা ভাল, ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের প্রতিদিনের জীবনে যে ভাবে খাওয়া-পরায় বদল ঘটে, সে ভাবেই নবদ্বীপের মঠমন্দিরে দেবতার সেবাপুজোর ধরনটা যায় বদলে। বৈষ্ণবরা একে বলেন ‘আত্মবৎ সেবা’।

ক্যালেন্ডারের পাতায় অঘ্রান মাস ভেসে উঠলেই শুক্তো-সরবত-দই বদলে যায় শীতের খিচুড়ি-কচুরি-পায়েসে। নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সম্পাদক অদ্বৈত দাস জানান, অঘ্রান, পৌষ, মাঘ— এই তিন মাস মঠ-মন্দিরে নিয়ম করে বাল্যভোগে খিচুড়ি দেওয়া হয়। রাতে কড়াইশুটির কচুরি আর সব্জি। নলেন গুড়ের পায়েস, সন্দেশ, রসগোল্লা বা কমলালেবুর মতো ফল দেওয়া হয় বিকেল বা ভোরের মঙ্গলভোগে।

ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দির পরিচালন ট্রাস্টের সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী জানান, শীতকালীন ভোগের পদ থেকে বাদ পড়ে যায় ডাব, সরবত, দই, ঘোল কিংবা উচ্ছে, পটলের মতো আনাজ। গরমেগুরুপাক পুষ্পান্ন ভোগ বাদ থাকে। শীতে পড়তেই ফিরে আসে পুষ্পান্ন। সঙ্গে নিয়মিত খিচুড়ি। ফুলকপির নানা পদ, পালং, বেগুন, বাঁধাকপি, পাঁচ তরকারি দেওয়া হয়। রাতে কড়াইশুটির কচুরি, লুচির সঙ্গে নতুন আলুর দম বা খেজুর গুড়ের পায়েস বাধ্যতামূলক এই সময়। শীতকাল পড়তেই মহাপ্রভুকে পিঠে পুলি ভোগ দেওয়া হয়। বলদেব মন্দির, সুদর্শন মন্দির, মদনমোহন মন্দির, সমাজবাড়ি, গোবিন্দবাড়ি-সহ অন্য মন্দিরে খিচুড়ি ও ভাজা দেওয়া হয় সকালের বাল্যভোগে। বলদেব মন্দিরে শীতল ভোগের চুড়ো করা খিচুরির মাথায় বাটিতে দেওয়া হয় ঘরে তৈরি ঘি। মন্দিরের পক্ষে কিশোর গোস্বামী জানান, পয়লা অঘ্রান থেকে শ্রীপঞ্চমী, শীতকাল ধরা হয়। এ সময়ে ভোগে সব রকমের মরসুমি উপকরণ ভোগে থাকে। খিচুড়ি, বেগুনভাজা, নারকেল কুচো, ফুলকপির ঘুগনি থেকে খেজুর গুড়ের পায়েস, পিঠেপুলি তো বটেই, বাদ যায় না বড়দিনের কেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

নবান্ন Nabanna Utsav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE