হাড্ডাহাড্ডি: জুনিয়র ডিভিশন লিগের খেলায় মুখোমুখি হরিহরপাড়ার রুকুনপুর ও বেলডাঙা দেবকুণ্ডু। বহরমপুর এফইউসি ময়দানে। ফাইল চিত্র
খেলা শুরু হতে আর দেরি নেই। মাঠের দু’পাশে গা ঘামাচ্ছে যুযুধান দুই পক্ষ। এমন সময় মাঠ জুড়ে হইহই, ‘এসে গিয়েছে, এসে গিয়েছে!’
মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হল তেল চকচকে বিরাট একটা খাসি। অন্য দিকে প্রমাণ সাইজের মুরগি। ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলের হাতে তুলে দেওয়া হবে এমনই জ্যান্ত পুরস্কার!
আচমকা দর্শকদের দিক থেকে বেজে উঠল ভেঁপু। কী ব্যাপার?
সেখানেও যুযুধান দু’দলের জন্য পুরস্কারের আয়োজন করেছেন গ্রামের লোকজন। তেকাঠির পিছনে বাঁধা একটি কচি পাঁঠা। পাশে এক কাঁদি কাঁচকলা। বলাই বাহুল্য, কোনটা কাদের জন্য।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে মঞ্চে বাঁধা পুরস্কার দু’টি মাঝে মধ্যেই ডেকে উঠছে। সে খেলা দেখতে পাওয়ার আনন্দে, নাকি ভয়ে সেটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তবে দু’দলের খেলোয়াড়রাই আড়চোখে দেখে নিচ্ছিল চতুষ্পদ দু’টিকে।
সে কালের মুর্শিদাবাদের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ধীমান দাস, নবদ্বীপের ক্লাব কর্তা নিত্যানন্দ আচার্য কিংবা করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার কর্তা দীপঙ্কর সাহারা শোনাচ্ছিলেন ফুটবলের পুরস্কার-কথা। তাঁরা জানাচ্ছেন, তখন এ সবই ছিল লোভনীয় পুরস্কার। সাতের দশক পর্যন্ত পুরস্কার বলতে ওই পাঁঠা কিংবা মুরগি। সঙ্গে উপরিপাওনা ভরপেট মাংস-ভাত।
সাতের শেষ ও আটের দশকের শুরুতে এল কাঁসা-পিতলের কলসি, হাঁড়ি, বালতির মতো উপহার। তেমন বড় টুর্নামেন্টে হয়তো জয়ী দলের খেলোয়াড়দের একটা করে কাঁসার থালা বাটি দেওয়া হত। নয়ের দশকে দলকে শিল্ড-ট্রফির সঙ্গে ভাল খেলোয়াড়দের দেওয়া হতো পোশাক, ছাতা, প্রেসার কুকার। সত্তর বা আশির দশকে খাসির মাংস বা ডিমভরা ইলিশের ঝোল খাইয়ে দিলেই জান লড়িয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন খেলোয়াড়েরা। ডোমকল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা ধীমান দাসের এখনও মনে আছে, ‘‘অনেক সময় পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়ি চেপে প্রত্যন্ত গ্রামে খেলতে যেতাম। গ্রামের মানুষ আমাদের নিতে আসতেন খেয়াঘাটে। গ্রামে ঢুকতেই ছেঁকে ধরতেন লোকজন। আন্তরিকতায় মুগ্ধ হতাম।”
তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল পুরস্কারও। ‘ফেল কড়ি, মাখো তেল’ এখন ফুটবলের মজ্জায় মিশে গিয়েছে। ক্লাবকর্তারা জানাচ্ছেন, নগদ টাকা পুরস্কার না থাকলে কোনও দলই আজকাল খেলতে রাজি হয় না। খেলার জন্য ফোন করলেই ও প্রান্ত থেকে প্রথম প্রশ্নই হল—‘জিতলে কত দেবেন?’
করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক মাকু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘শুনতে খারাপ লাগলেও এখন এটাই বাস্তব। এমন অনেক ভাল খেলোয়াড় আছেন যাঁরা অর্থাভাবে ভাল জুতো, জার্সিও কিনতে পারেন না। তাছাড়া তাঁর উপরেই ভর করে চলে সংসার। খেপ খেলাটাকেই অনেকে জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’’
দীপঙ্করবাবু জানাচ্ছেন, মাঝে কিছু দিন জুতো-জার্সিও পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কখনও কখনও মোটরবাইকে ভরে দেওয়া হয়েছে পেট্রোলও। কিন্তু এখন নগদেরই চাহিদা বেশি।
(চলবে) সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy