Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রোগীর মৃত্যুতে গাফিলতির নালিশ

শনিবার এই হাসপাতালে এসেই চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা কর্মীদের মানবিক হওয়ার পারমর্শ দিয়েছিলেন এলাকার সাংসদ তাপল পাল। তার পরে দু’দিনও কাটল না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠল সেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। দুর্ঘটনায় জখম এক ব্যক্তি শয্যা থেকে পড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ তাঁর কোনও চিকিৎসা হয়নি।

সন্তোষ মিশ্রের মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সন্তোষ মিশ্রের মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

শনিবার এই হাসপাতালে এসেই চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা কর্মীদের মানবিক হওয়ার পারমর্শ দিয়েছিলেন এলাকার সাংসদ তাপল পাল। তার পরে দু’দিনও কাটল না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠল সেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে।

দুর্ঘটনায় জখম এক ব্যক্তি শয্যা থেকে পড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ তাঁর কোনও চিকিৎসা হয়নি। এমনকী শ্বাস কষ্ট হলেও দেওয়া হয়নি অক্সিজেন। মৃতের স্ত্রী হাসপাতালের, ওয়ার্ড মাস্টার, সুপার এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মৃতের নাম সন্তোষ মিশ্র (৪০)। তাঁর বাড়ি ধানতলা থানা এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে সোমবার রাত দুটো নাগাদ ধুবুলিয়ার বটতলায় একটি দূর্ঘটনায় গুরুতর হন সন্তোষ মিশ্র এবং তাঁর পরিচিত ধানতলারই দিলিপ বিশ্বাস। সম্তোষবাবু একটি এনডিও-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বটতলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধার থেকে একটি দুর্ঘটনাগ্রস্থ অল্টো গাড়ি থেকে সন্তোষবাবু এবং দিলীপবাবুকে উদ্ধার করে পুলিশ শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের গাড়িটি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির চাকার সঙ্গে আটকে ছিল। পুলিশ মনে করছে, হয় সন্তোষবাবুদের গাড়িটি লরিতে ধাক্কা মেরেছে, অথবা অন্য কোনও গাড়ি অল্টো গাড়িটিকে ধাক্কা মেরেছে।

অভিযোগ, এদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে যান সন্তোষ মিশ্র। ঘন্টা দুয়েক ওয়ার্ডের মেঝেতেই পড়ে ছিলেন তিনি। পরে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং নার্সরা এসে তাঁকে মেঝে থেকে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শয্যা না তুলে মেঝেতেই শয্যা তৈরি করে তার উপর তুলে দেন।

সন্তোষ মিশ্রের শয্যার পাশে ভর্তি রয়েছেন হাসখালির চিত্রশালীর বিষ্ণুপদ মন্ডল। তাঁর সঙ্গে সারারাত এই ওয়ার্ডে ছিলেন বিষ্ণুপদবাবুর ছেলে শঙ্কর মন্ডল। শঙ্করবাবু বলেন, “শয্যা থেকে পড়ে যাওয়ার পর সন্তোষ মিশ্র যন্ত্রনায় ছটফট করেছেন দেখে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেউ আসেনি। সময়মত চিকিৎসাও হয়নি।” সোমবার সকালে সন্তোষবাবুর স্ত্রী দীপালি মিশ্র মেয়ে সঙ্গিতাকে নিয়ে এ দিন সকালে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আসেন।

দীপালীদেবী জানান, “রবিবার দুপুরে আমার স্বামী দিলীপ বিশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। রাত পৌনে দুটো নাগাদ ফোন করলেও তাঁর কথা বুঝতে পারিনি। এ দিন সকালে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্বামী মেঝেতে পড়ে রয়েছে।”

তাঁর দাবি, বেড থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে সন্তোষবাবুর চোট আরও গুরুতর হয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পরে চেয়েও অক্সিজেন মেলেনি। বার বার ডাকলেও কোনও চিকিৎসক আসেননি।

মৃতপ্রায় অবস্থায় এখান থেকে তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। দীপালিদেবীর অভিযো‌গ, হাসপাতালের গাফিলতির কারনেই তাঁর স্বামীর ম়ত্যু হল। তার পরেই তিনি অভিযোগ করেন।

সন্তোষবাবু জেলা পরিষদের বন ও ভূমি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ রিক্তা কুন্ডুর পরিচিত। ঘটনার খবর পেয়ে রিক্তাদেবী এদিন হাসপাতালে আসেন। তিনিও মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারীককে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের কথা বলেন।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার প্রশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, “শয্যা থেকে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়েই আমরা ওয়ার্ডে গিয়ে ওই রোগীকে শয্যায় তোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত ওজনের কারণে তাঁকে তোলা সমস্যা হচ্ছিল। তাই, হাসপাতালের মেঝেতেই শয্যার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা চলছিল।” প্রশান্তবাবু জানিয়েছেন, সন্তোষবাবুর বাড়ির লোক কেউ ছিলেন না। সেই সময় তাঁকে শয্যায় তোলা হলে, ফের তাঁর পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার সুদীপ সরকার বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে এলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar Medical Negligence Patient Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE