ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে দু’ বছর আগে। কিন্তু ওষুধের গায়ে এক্সপায়েরি ডেট ২০১৬-র জায়গায় সযত্নে লাগানো হয়েছিল স্টিকার। তাতে জ্বলজ্বল করছে এক্সপায়েরি ডেট—২০২০!
প্রথমে এই স্টিকার মারার ব্যাপারটি খেয়াল করেননি ক্রেতা। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে গিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল বছর দু’য়েকের শিশুকে। জ্বরে ভুগঠিল সে। কিন্তু ওষুধ খেয়ে জ্বর কমার বদলে উল্টে বমি করতে থাকে সে। ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে। সন্দেহ হওয়ায় এক্সপায়েরি ডেট বা মেয়াদউত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ ভাল করে পরীক্ষা করে দেখতে যান বাড়ির লোক। তখনই চোখে পড়ে, জায়গাটিতে একটি স্টিকার আটকানো রয়েছে। সেটি খুঁটে তুলতেই নীচে বেরিয়ে পড়ে ‘২০১৬’-র এক্সপায়েরি ডেট! চমকে ওঠেন তাঁরা। হাঁসখালি থানায় ওই ওষুধ বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।
অভিয়োগের ভিত্তিতে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের নাম সুজয় পাল। বাড়ি ধানতলা থানার দত্তফুলিয়া এলাকায়। হাঁসখালির ভায়না বাজারে তাঁর ওষুধের দোকান রয়েছে। সেই দোকান থেকেই স্টিকার লাগানো মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ কেনা হয়েছিল। শনিবার রাতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “এর সঙ্গে কোনও বড় চক্র জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এই জেলারই কল্যাণীতে বছর দেড়েক আগে এইরকম একটি চক্রের খোঁজ মিলেছিল।
কল্যাণী পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমর রায়ের একটি ওষুধের দোকান ছিল জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উল্টোদিকে। সেখানকার ওষুধ হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য তিনি চিকিৎসকদের চাপ দিতেন বলে অভিযোগ। বছর দেড়েক আগে এলাকার বাসিন্দারা ওই দোকানে ভাঙচুর চালান। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পুলিশ-ড্রাগ কন্ট্রোল তাঁর দোকানে কল্লাশি চালিয়ে প্রচুর জাল ও মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ বাজেয়াপ্ত করেছিল। পুলিশ সেইসময় জানিয়েছিল, মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধের লেভেল খুলে সেই জায়গায় নতুন লেভেলে মেয়াদউত্তীর্ণ হওয়ার নতুন তারিখ বসিয়ে বিক্রি করা হত।
বছর দু’য়েক আগে কলকাতাতেও এই রকম একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সেই চক্রটি কলকাতার একাধিক ওষুধের দোকান থেকে মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে এসে রিমুভার দিয়ে তারিখ মুছে আবার নতুন তারিখ বসিয়ে দোকানগুলিতে পাঠিয়ে দিত।
ওষুধের দোকানগুলির উপর নজরদারি চালানোর কথা ড্রাগ কন্ট্রোলের। গোটা রাজ্যে সেই সংস্থার অফিসারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তার জন্য এই ধরনের চক্রের জালও ছড়াচ্ছে। যেমন, নদিয়ায় ৬ জন ড্রাগ ইন্সপেক্টর থাকার কথা। কিন্তু গত এক বছর ধরে আছে মাত্র এক জন। মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৬ হাজার খুচরো ও পাইকারি ওষুধের দোকান রয়েছে। আর এই ৬ হাজার ওষুধ দোকানের কাজকর্মে নজরদারি চালানোর জন্য রয়েছেন মাত্র দু’জন। এক জন পরিদর্শককে প্রায় ৩ হাজার দোকান পরিদর্শন করতে হয়। তাঁদের আবার যাতয়াতের জন্য কোনও গাড়ি বরাদ্দ নেই। ফলে ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দারের মত অবস্থা তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy