সুরাইয়া খাতুন।
লালগোলায় শিশু খুনের ঘটনায় এখনও অন্ধকারে পুলিশ। কেন ওই শিশুকন্যাকে খুন করা হল, তার কারণ স্পষ্ট হলেও কে বা কারা খুন করেছে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় পুলিশ। এমনকি নিহতের পরিবারের লোকজনও সন্দেহভাজনের নাম পুলিশকে জানাতে পারেনি। শুধুই কি কানের দুল ছিনতাইয়ের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য ওই শিশুকে খুন করা হল, নাকি এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে, তা-ই হাতড়ে
বেড়িয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে লালবাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে এখনও যেটা অনুমান করা হচ্ছে, কানের দুল হাতাতেই খুন করা হয়েছে। যে ওই কাজ করেছে শিশুটি সম্ভবত তাকে চিনে ফেলেছিল। সেই জন্য তাকে খুন করা হয়েছে বলে সন্দেহ। যে খুন করেছে সে পরিচিত কেউ। ওর প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ তবে এদিন সুরাইয়া খাতুন নামে ওই শিশুটির বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর দুই প্রতিবেশীকে তিনি সন্দেহ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কারও নাম আমি বলব না। কারণ, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। তবে এটুকু বলতে পারি, অপরাধী আমার খুব চেনা কোনও লোক। তবে সামান্য ক’টা টাকার লোভে কেউ যে এভাবে খুন করতে পারে ভাবতে পারছি না।’’
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বিলবোরাকোপরার রামনগরের বাসিন্দা ছ’ বছরের সুরাইয়া। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে তার বাড়ির লোক। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সুরাইয়ার কাদামাখা দেহ উদ্ধার হয়। মুখ থেকে গ্যাঁজলা উঠছিল। বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে ভুট্টার খেতের আল থেকে মেলে দেহটি। তড়িঘড়ি তাকে স্থানীয় কৃষ্ণপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সুরাইয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
লালগোলার বিলবোরাকোপরা ছোট্ট গ্রাম। কয়েক বিঘা জমিতে ধান আর মরসুমি সব্জি বেচে রফিকুলের সংসার।মাস ছয়েক আগে কান ফোঁড়া’র অনুষ্ঠান ছিল বাড়িতে। গাঁ গঞ্জের এই রীতি নতুন নয়। দুল পরতে মেয়ের কান ফুটো করার পরে হাত পয়সা এলে পরে তার জন্য গড়ে দেওয়া হয় নিয়মরক্ষার গয়না। ধান বেচে হাতে কিছু টাকা আসতেই মেয়ের জন্য তাই সাড়ে ছ’হাজার টাকা দিয়ে সোনার দুল গড়ে দিয়েছিলেন রফিকুল। তারই পরিণতিতে খুন।
পাড়ায় সকলের খুব আদরের ছিল সুরাইয়া। শনিবার এক গ্রামবাসী জানান, পাড়ায় হেসে খেলে বেড়াত সুরাইয়া। গ্রামের লোকজন তাকে খুবই ভালবাসতেন। খেলাধুলোর পাশাপাশি পড়াশোনাতও সে ভাল ছিল। সুরাইয়ার এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না গোটা গ্রাম।
এদিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামে থমথমে পরিবেশ। সুরাইয়াদের বাড়ির সামনে জটলা। স্থানীয় বাসিন্দা আলমগির শেখ বলছিলেন, ‘‘ও (সুরাইয়া) সকলের প্রিয় ছিল। মাঝেমধ্যে আমার কাছে গাড়ি চড়ার আবদার করত। সবকিছু চোখের সামনে ভাসছে। মাত্র ওই ক’টা টাকার জন্য মেরে ফেলল শিশুটাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy