Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রদেশের কোপে ব্লক সভাপতি

দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন আগেই। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই সিপিএমের প্রার্থীকে নিয়ে তিনি প্রচারেও বেরিয়েছেন। আর সেই ‘অপরাধে’ শেষ পর্যন্ত দল থেকে সাসপেন্ড করা হল হাঁসখালি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি দীনেশ চক্রবর্তীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৯
Share: Save:

দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন আগেই। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই সিপিএমের প্রার্থীকে নিয়ে তিনি প্রচারেও বেরিয়েছেন। আর সেই ‘অপরাধে’ শেষ পর্যন্ত দল থেকে সাসপেন্ড করা হল হাঁসখালি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি দীনেশ চক্রবর্তীকে। শনিবার রাতে প্রদেশ নেতৃত্ব সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন জেলা সভাপতি অসীম সাহাকে। অসীমবাবু বলেন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দীনেশ চক্রবর্তীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁর‌ পরিবর্তে মন্মথনাথ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’

প্রথম থেকেই কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রটি নিয়ে দুই জোট শরিক সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে একটা টানাপড়েন চলছিল। বছর খানেক আগে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে সিপিএম ও কংগ্রেস রীতিমতো খারাপ ফল করে। জামানত জব্দ হয় কংগ্রেসের বর্তমান প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডলের। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রথম দিকে জোট শরিক দুই দলই এই আসনে প্রার্থী দিতে চাইছিল না। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস হাঁসখালি দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ বিশ্বাসের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে।

সেই মতো বিশ্বনাথবাবুকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। গোটা কেন্দ্র জুড়ে তাঁর নামে দেওয়াল লেখাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে বিশ্বনাথবাবুর পরিবর্তে চাকদহের বাসিন্দা প্রতাপ রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁরা প্রবল আপত্তি জানান। শেষ পর্যন্ত প্রতাপবাবু নিজেই জানিয়ে দেন যে, তিনি প্রার্থী হবেন না। এই পরিস্থিতিতে দীনেশবাবু-সহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতৃত্ব আবার বিশ্বনাথবাবুর হয়ে সওয়াল করতে থাকেন। কিন্তু নিচু তলার কর্মীদের সেই দাবিকে পুরোপুরি অস্বীকার করে প্রদেশ নেতৃত্ব নিত্যগোপাল মণ্ডলকে প্রার্থী করেন। এরপরই কার্যত বিদ্রোহ করে বসেন হাঁসখাসি ব্লক কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁরা জানিয়ে দেন যে, নিত্যগোপালবাবুকে তাঁরা কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না এবং তাঁর হয়ে প্রচারও করবেন না।

এরমধ্যে দীনেশবাবু ও তাঁর অনুগামীরা স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধা‌ন্ত নেন যে, প্রার্থী নিয়ে এই অচলবস্থা কাটাতে সিপিএম থেকে কাউকে প্রার্থী করা হোক। জেলা সিপিএম আগেই অবশ্য এই বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে নিয়েছিলেন। কংগ্রেসও নিজের অবস্থানে অনড় থাকে। প্রদেশ নেতৃত্বের নির্দেশে নিত্যগোপালবাবু মনোনয়ন জমা দেন। পাল্টা সিপিএমের প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাসও মনোনয়ন জমা দেন। কিন্তু দীনেশ চক্রবর্তী-সহ ব্লকের সিংহ ভাগ কংগ্রেস নেতারা সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাসের হয়ে প্রচার করতে থাকেন।

প্রদেশ নেতৃত্ব জেলা সভাপতি অসীম সাহা ও ওই বিধানসভা এলাকার নেতৃত্বকে জানান, যাঁরা দলের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করবেন তাঁদের সাসপেন্ড করা হবে। প্রদেশ নেতৃত্বের এই হুমকিতেও বিশেষ কোনও ফল হয়নি। হাঁসখালির কংগ্রেস নেতৃত্বও জানিয়ে দেন যে, তাঁরা তৃণমূলকে যে কোনও মূল্যে হারাতে চান। আর সেটা নিত্যগোপালকে দিয়ে সম্ভব নয়। ফলে দীনেশবাবু ও তাঁর অনুগামীরা সিপিএম প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপরেই দীনেশবাবুকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন প্রদেশ নেতৃত্ব। এই সিদ্ধান্তে দীনেশবাবু অবশ্য বিচলিত নন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কর্মীদের নিয়েই রাজনীতি করি। তাই কর্মীদের ভাবাবেগের বাইরে যেতে পারলাম না। কর্মীরা এই আসন তৃণমূলকে উপহার দিতে নয়, ছিনিয়ে নিতে চান। আমিও তাঁদের পাশেই থাকতে চেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Wrath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE