Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্কুলছুটের বয়স দেখছি বেশি, ‘উঁহু ভর্তি নয়!’

মিলি খাতুন স্কুলছুট হয়েছিলেন ওই বালিকা বয়সেই। রুজির টানে তার পরিবার চলে গিয়েছিল দিল্লির গাজিয়াবাদের বস্তিতে।

স্কুলে ফিরল দুই বোন। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে ফিরল দুই বোন। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

অর্জুনপুরের বাবলি খাতুন মায়ের পাশে বিড়ি বাঁধতে বসে পড়েছিল ন’বছর আগে। ছেঁড়া চটের উপরে বিড়ি বাঁধার কাজ সেরে আর কখনও স্কুল-বালিকা হয়ে উঠতে পারেনি।

বাড়িতে অভাব, দিনমজুর বাবার অনিয়মিত আয়ে সংসার বড্ড টেনে চলে। মায়ের পাশে বিড়ি বেঁধে তাই বাড়তি আয়ের সেই কড়া বাস্তব ছেড়ে স্কুলে পড়ার ‘শোখিনতা’ তার আর হয়ে ওঠেনি।সেই পঞ্চম শ্রেণিতে ইতি টানা বাবলি এখন সদ্য কুড়িতে ফের স্কুলে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু বেঁকে বসেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাদের ছেঁদো যুক্তি, এত বড় মেয়ে ছোটদের সঙ্গে বসলে তারা ‘পাকা’ হয়ে উঠবে!

মিলি খাতুন স্কুলছুট হয়েছিলেন ওই বালিকা বয়সেই। রুজির টানে তার পরিবার চলে গিয়েছিল দিল্লির গাজিয়াবাদের বস্তিতে। দিল্লি থেকে উচ্ছেদ হয়ে গ্রামে ফিরে ফরাক্কার মহাদেবনগরের মিলি এখন ১৬। স্কুলে ভর্তি হতে গেলে শুনতে হয়েছে, ‘এখন কি আর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া যায়!’ কেন যায় না?শিক্ষা দফতরের নিয়মানুসারে শ্রেণি অনুযায়ী বয়স কম থাকলে ভর্তি হওয়া যায় না ঠিকই তবে বেশি বয়সে নিচু ক্লাশে ভর্তিতে কোনও বাধা নেই। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন নিয়মহীন গোঁয়ার্তুমির জন্য মিলি-বাবলির মতো অনেকেই এখন ইচ্ছে থাকলেও ভর্তি হতে পারছেন না স্কুলে।’’ স্কুলছুট এমনই ৮৪ জন বালিকাকে ফের স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে ফরাক্কা প্রশাসন। এ পর্যন্ত মাত্র ৫ জনকে ভর্তি করা গিয়েছে, বাকিরা পড়তে চেয়েও ঘরের উঠোনেই বসে।জেলা প্রশাসনের পক্ষে এ নিয়ে কাজ করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের পক্ষে জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে অশান্তির কারণে জেলার সব ব্লকেই আটকে রয়েছে সমীক্ষার কাজ। যাদের খোঁজ মিলেছে তাদের ভর্তি করতে গিয়েও বিস্তর হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে। বেঁকে বসছে স্কুলগুলি।’’ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ফরাক্কা ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গত দু’মাস ধরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে একটি সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, যে শ্রেণিতে তারা পড়াশুনো ছেড়ে দিয়েছিল সেই শ্রেণিতে তাদের আর ভর্তি নিতে রাজি নয় অধিকাংশ স্কুল। অর্জুনপুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক রফিকুল ওয়ারা যেমন এ ব্যাপারে একবগ্গা, “১৮ বছরের মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণিতে কো-এডুকেশন স্কুলে ভর্তি করানো সম্ভব নয়।” কেন? কোনও স্পষ্ট উত্তর তাঁর কাছে নেই। জেলার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (ফরাক্কা) মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, “কোন বয়সে কোন ক্লাসে ভর্তি হবে ছাত্রছাত্রীরা তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। তবে, স্কুলছুটদের ভর্তির জন্য আমাদের রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে ব্যবস্থা করা হবে। ওরা না হয় সেখানেই পড়বে।’’তবে নিয়ম সে কথা বলছে না। বয়স বেশি হওয়া সত্ত্বেও নিজের অস্বস্তিটুকু ঝেড়ে কেউ যদি নিচু ক্লাশে ভর্তি হতে চায়, বাধা নেই। কিন্তু সে কথা শুনছে কে, মানছেই বা কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE