তিল তলার জানলা’টা হাট করে খুলে দিলেই ধোপঘাটির জলা। সারা দিন বক, ঘেঁটুফুলের ঝোপ আর ফড়িংয়ের হুটোপুটি। ফেলে আসা চল্লিশটা বছর যেন চুপ করে আছে সেই জলায়।
কেউ সত্তর কারও জীবন শীর্ণ হয়ে এসেছে আশির ধাক্কায়। ছায়া পড়া জীবনে বহরমপুর শহরের ধোপঘাটি, লাগোয়া বস্তি, শিমুল-বকুলের সারি — ‘আনন্দ নিকেতন’ ছেড়ে যেতে চান না তাঁরা।
তিনতলার বৃদ্ধাশ্রমটাকে বড় আপন করে ফেলেছেন তাঁরা। সমস্যাটা পেকেছে গত বৃহস্পতিবার ‘আনন্দ নিকেতন ২’-এর কর্তৃপক্ষের নোটিসে। যার সার কথা— ‘আর্থিক ও প্রশাসনিক কারণে’ দু’টি বৃদ্ধাশ্রমকে একটিতে রূপান্তরিত করা হবে। বহরমপুর শহরের ‘আনন্দ নিকেতন ২’-এর আবাসিকদের আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ভাগীরথী পার হয়ে ৪ কিলোমিটার দূরে মাঝেরপাড়ায় অবস্থিত ‘আনন্দ নিকেতন ১’- এ চলে যেতে হবে।
ধোপঘাটের পাড়ে ছায়াছন্নতায় শেষবেলাটুকু কাটিয়ে দেওয়া ওই আট আবাসিকের তাই বড় মনখারাপ।
তাঁরা বলছেন, ‘‘আর তো ক’টা দিন বাবা, একেবারেই না হয় যাব। আবার আমাদের টেনে হিঁচড়ে অচেনা জায়গায় নিয়ে যাওয়া কেন!’’ তবে, মানসিক ভাবে পুরনো ঠাঁই পছন্দের পাশাপাশি কিছু গার্হস্থ প্রশ্নও রয়েছে তাঁদের। ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের ‘আনন্দ নিকেতন ১’- এ থাকলে সব পরিষেবা মেলে না। কাছে পিঠে নেই ব্যাঙ্ক, এটিএম নেই ডাকঘরও। তা ছাড়া ধোপঘাটি বস্তির কয়েকটি শিশুকে পড়ান ‘আনন্দ নিকেতন ২’- এর আবাসিক পূর্ণা ভট্টাচার্য আর গায়েত্রী বসু। তাঁরা দু’ জনেই বলেন, ‘‘ভাগীরথীর ওপারে আমদের যেতে হলে শিশুগুলি পড়বে কার কাছে?’’
বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি ‘না লাভ, না লোকসান’-এর ভিত্তিতে নদীর দুই পাড়ে দু’টি বৃদ্ধাবাস চালায়। সম্পাদক পরিমল সরকার বলেন, ‘‘আথির্ক ও প্রশাসনিক কারণে দু’টি বৃদ্ধাবাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া আর উপায় কী!’’
যা শুনে খোলা জানলার দিকে তাকিয়ে এক বৃদ্ধ বলছেন, এক বৃদ্ধ বলছেন, ‘‘আর কেন ঠাঁই বদল, এ বার না হয় একেবারেই অন্য কোথাও চলে যাব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy