অবস্থানে অনড় ডাক্তারেরা। কল্যাণীর জেএনএম-এ। ছবি: প্রণব দেবনাথ
মনে করা হয়েছিল, বুধবার আউটডোর বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে। স্বস্তি পাবেন রোগীরা। কিন্তু কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বস্তির বদলে বৃহস্পতিবার সমস্যা উল্টে চূড়ান্ত আকার নিল।
আউটডোর তো খুললোই না, তার উপর ইন্ডোর ও জরুরি বিভাগের পরিষেবাও কার্যত তলানিতে এসে ঠেকল। সেই সঙ্গে হতাশ, বিক্ষুব্ধ রোগী ও তাঁদের পরিজনের সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উত্তপ্ত তর্কাতর্কি, হাতাহাতিতে হাসপাতাল চত্বর প্রায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। স্লোগান ও পাল্টা স্লোগান উঠতে থাকে। বহিরাগত জনতা হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে চিকিৎসকদের তাড়া করায় তাঁরা ইমার্জেন্সির গেট বন্ধ করে ভিতরে ঢুকে পড়েন। বাইরে মারমুখী জনতা দরজা ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে চিৎকার করতে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে আসে পুলিশ ও র্যাফ।
বিকেলে চিকিৎসকদের বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বের না-হওয়ায় সন্ধ্যা নাগাদ জুনিয়র ডাক্তারেরা হস্টেল ছাড়তে শুরু করেন। ইন্টার্নদের তরফে মেহেদি হাসান মোল্লা বলেন, ‘‘স্রেফ নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমরা হস্টেল ছাড়ছি। তবে আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছি না।’’
ফিরে যাচ্ছেন রোগী। কল্যাণীর জেএনএম-এ।
এ দিন সকাল ৯টা বেজে যাওয়ার পরেও আউটডোরে তালা খুলছে না দেখে রোগীদের অসন্তোষ ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই আউটডোরে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা আউটডোরের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। ঘণ্টা খানেক অবরোধ চলে। অবরোধকারীদের অনেকে জুনিয়র ডাক্তারদের দিকে তেড়ে যান। দু’পক্ষের বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ এসে জুনিয়র ডাক্তারদের আউটডোর পরিষেবা চালু করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা তা শোনেননি।
এর পর পুলিশ অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে কল্যাণী পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এক দল লোক হাসপাতালে ঢুকে জুনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দিতে থাকেন। জরুরি বিভাগের সামনে তাঁদের বিক্ষোভ-অবস্থানে ‘সিএম হায় হায়’ ধ্বনি উঠতেই বহিরাগত সেই জনতা মারমুখী হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। আত্মরক্ষায় চিকিৎসকেরা তখন জরুরি বিভাগের গেট বন্ধ করে দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন। শেষ পর্যন্ত কল্যাণী থানার পুলিশ গিয়ে বাইরের জনতাকে সরিয়ে দেয়। জরুরি পরিষেবা ফের চালু হয়। কিন্তু হাসপাতালের সব ওয়ার্ডেই বেশিরভাগ রোগীকে এ দিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। যেমন নাজিরপুরের বাসিন্দা অমল বিশ্বাসের স্ত্রী-র অস্ত্রপচার হয়েছে দিন দু’য়েক আগে। বুধবার রাত থেকে কোনও ডাক্তার তাঁকে দেখতে আসেননি। এ দিন তাঁকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। আবার দেখা গেল, একটি শিশুর মুখ পুড়ে গিয়েছে। এখনও দগদগে ঘা মুখ জুড়ে। তাকেও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy