প্ল্যাটফর্ম চত্বরে দেখা নেই রেল পুলিশের। সাগরদিঘিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এই স্টেশন চত্বরেই মদ্যপের মারে স্কুলছাত্রের বেঘোরে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার দু’দিন পরে বুধবার সাগরদিঘির স্টেশন চত্বরে গিয়ে দেখা গেল মদ-জুয়া, গাঁজার ঠেক-এর রমরমায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরেও ন্যূনতম তৎপরতা দেখাবে না এলাকার পুলিশ-প্রশাসন বা রেল কর্তৃপক্ষ? তা হলে আর কবে সক্রিয় হবে পুলিশ? এই প্রশ্নই ঘুরছে স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে।
ভুক্তভোগী বাসিন্দারা সমস্বরে জানালেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই সাগরদিঘি স্টেশন চত্বরে মাদক কারবারের এত বাড়বাড়ন্ত। সাগরদিঘি স্টেশনের রেলকর্মীরাও মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্যে এতটাই উদ্বিগ্ন যে, তাঁদের আশঙ্কা এখনই লাগাম টানা না গেলে যে কোনও সময় ফের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। স্টেশন ম্যানেজার জয়শঙ্কর মহাজনের কথায়, ‘‘বহু আগেই নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে রেল পুলিশ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তা-ও একবার নয়, একাধিকবার। কোনও ফল হয়নি।’’
সাগরদিঘি স্টেশনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রেল বাজার। বাজারকে ঘিরে দুটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঝুপড়ি দোকান। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তার কোনওটা চায়ের, কোনটা পানের। কয়েক’টি নিছকই আড্ডার ঠেক। অভিযোগ, বহু দোকানেই অন্য ব্যবসার আড়ালে বেআইনি মদ, গাঁজার রমরমা কারবার চলে। বেশ কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় সে ভাবে বসতি ছিল না। ফলে তখন মদের দোকান নিয়ে তেমন সমস্যা তৈরি হয়নি। এখন সাগরদিঘি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রীতিমতো ঘন জনবসতি তৈরি হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সমস্যাও।
অভিযোগ, বিকেল হতেই প্ল্যাটফর্মে আসর সাজিয়ে বসছে মদ্যপরা। মদ খেয়ে দিনে দুপুরে রাস্তায় বেসামাল হয়ে ইতিউতি লোক পড়ে রয়েছে, এমন ছবিও বিরল নয়। স্টেশন পাড়ার বাসিন্দা টিঙ্কু মাল জানালেন, মাতালদের ভয়ে বিকেলের পরে স্টেশন এলাকা দিয়ে মেয়েরা তো ছাড়, ছেলেরাও যাতায়াত করতে সাহস করে না। প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অনেকেরই অভিযোগ। স্টেশন চত্বরের পাশেই থাকেন দুলালী বেওয়া। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন ধরতে প্ল্যাটফর্মে যাওয়া ছাড়া উপায় কই। চোখ-কান বন্ধ রেখেই যাতায়াত করতে হয়!’’
স্টেশন পথে যাতায়াতে কম ঘুরতে হয় বলে অনেকে স্টেশনের রাস্তা বেছে নেন। ওই দিন বাড়ির পথ ধরতে কুণালও একই পথ নিয়েছিল। পথ সংক্ষেপ করতে স্টেশনের রাস্তাকে বেছে নেন সাগরদিঘি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সামসুন্নেহার খাতুনও। তিনি বলেন, ‘‘সকালের দিকে প্রায়ই স্টেশন চত্বর দিয়ে যাতায়াত করতাম। তবে বিকেলে ফিরতাম অন্য রাস্তা দিয়ে। কুণালের ঘটনার পরে বিকেলে তো দূর, সকালেও স্টেশন হয়ে কলেজে যাব কিনা ভাবছি।’’ কালেভদ্রেও রাজ্য পুলিশ বা রেল পুলিশের দেখা মেলা না, ক্ষোভ এলাকাবাসীর। অনেকেই মনে করেন, ‘‘পুলিশের নজরদারি থাকলে কুণালকে ও ভাবে মরতে হত না।’’
এই অবস্থায় দাবি উঠছে স্টেশন থেকে সমস্ত মদের ভাটি উচ্ছেদ করার। সাগরদিঘি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তামিজুদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে মঙ্গলবার সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছি, তারা যেন ভুলেও স্টেশন চত্বর দিয়ে যাতায়াত না করে।’’ পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সতর্কতা, দাবি প্রধান শিক্ষকের। কুণালের দিদিমা সোনালি পাঠকের আর্জি, ‘‘স্টেশন চত্বরের সমস্ত মদের ঘাঁটি ভেঙে ফেলুক পুলিশ। যাতে নির্দোষ নাতির মতো আর কারও কখনও এ ভাবে কারও মৃত্যু না হয়।’’
কেন ছাত্রমত্যুর পরেও হেলদোল নেই? কবে অভিযানে নামবে রেল পুলিশ? জিআরপি ওসি (আজিমগঞ্জ) তাপস চট্টোপাধ্যায় সাগরদিঘি স্টেশনে মাদক কারবারের রমরমার কথা মেনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়নি তা নয়। কিন্তু, অভিযানের কিছু দিন পরেই যে কে সেই অবস্থা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করে, নিয়মিত কিছু দিন অভিযান চালাতে পারলে এর মোকাবিলা করা সম্ভব হত। তাঁর দাবি, সে জন্যে যত ‘ফোর্স’-এর প্রয়োজন রয়েছে ততটা নেই। তবে তাঁর আশ্বাস, এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে যৌথ অভিযান চালানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy