Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Higher Secondary results 2020

মায়ের আঁচলেই বাঁধা ছিল সাফল্যের চাবি

চলতি বছরের মাধ্যমিকের রাজ্যের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানাধিকারী বিভাবসু মণ্ডলের মা বিউটি মণ্ডল জানাচ্ছেন, “ছেলেদের সখ আহ্লাদ ছাড়া আমার আলাদা কিছু নেই।”

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, মেয়ে শৈলী- জোসেনুরা বিবি, মেয়ে নোশিফা- নাসরিন বানু, ছেলে রবিউল

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, মেয়ে শৈলী- জোসেনুরা বিবি, মেয়ে নোশিফা- নাসরিন বানু, ছেলে রবিউল

বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০৩:৩৬
Share: Save:

ঠিক যেন কোনি-র ক্ষিদ্দা। তিনি যেমন বলতেন, ‘ফাইট কোনি ফাইট!’ বহরমপুরের শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, ডোমকলের নাসরিন বানু কিংবা জঙ্গপুর শহরের জোসেনুর বিবিও তেমন বারবার নিজেদের সন্তানদের বলতেন, ‘‘পারবি তুই পারবি!’’ কখনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, কখনও অর্থের। তার মধ্যেই, এমন মায়েরা সারা ক্ষণ পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন সন্তানদের। সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফলে তাঁদের মুখ রেখেছে সন্তানেরাও।

চলতি বছরের মাধ্যমিকের রাজ্যের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানাধিকারী বিভাবসু মণ্ডলের মা বিউটি মণ্ডল জানাচ্ছেন, “ছেলেদের সখ আহ্লাদ ছাড়া আমার আলাদা কিছু নেই।”

তবে শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর চিন্তা শুধু মেয়ে শৈলী চৌধুরীর পড়াশোনা নিয়েই ছিল না। ২০১৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে মেয়ের কোমরের হিপ জয়েন্টে টিউমার ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারের পরেও তা স্বাভাবিক হয়নি। পরে আবার ওই জয়েন্ট থেকে হাঁটু পর্যন্ত ইস্পাতের রড ঢোকানো হয়েছে। স্বাভাবিক চলফেরার ক্ষমতা হারিয়েছে সে। নিচু হতে পারে না। মেধাবী মেয়ে যাতে হতাশায় ডুবে না যায় তার জন্য সদাজাগ্রত শর্মিষ্ঠা। তিনি বলেন, ‘‘ওর পাশেই বসে থাকি। ও না ঘুমোতে গেলে আমার ঘুমও আসে না।” মেয়েকে বলতেন, “তুই পারবি গুড্ডি। দেখে নিস!” শৈলী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে ৯৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে। শর্মিষ্ঠা বলছেন, “লড়াইয়ের তো সবে শুরু। ওর স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া। ততদিন লড়ব।”

মেয়ে দশম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকে মেয়ের পড়াশোনার প্রতি আরও সজাগ হয়েছেন নোশিফা খাতুনের মা জোসেনুর বিবি। খুব ভোরে বিছানা ছাড়তে হয় জোসেনুর বিবিকে। তখনই মেয়েকে বিছানা থেকে তুলে দিতেন, নিরিবিলিতে পড়াশোনা ভাল হয় বলে। জোসেনুর বলছেন, “আমার সঙ্গে বিড়ি বাঁধত। পরে ঠিক করলাম, ওকে পড়ার সময় দিতে হবে। আমার মুখ রেখেছে।” হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছে নোশিফা।

ডোমকলের রবিউল হাঁটতে চলতে পারে না। হাতও নাড়াতে পারে না। মা নাসরিন বানু বলছেন, ‘‘শুধু ওর কানে নয়, নিজের মনেও বারবার বলতাম, পারবে, আমার ছেলে ঠিক পারবে।’’ উচ্চমাধ্যমিকে ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে মায়ের আশা পূর্ণ করেছে রবিউল।

নাসরিন, জোসেনুরা, শর্মিষ্ঠা সকলেই বলছেন, লড়াই সবে শুরু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary results 2020 Berhampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE