মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি মিলেছিল দেড় দশক আগে। এ বার ডোমকলের মুকুটের যুক্ত হল নতুন পালক। বুধবার রাজ্য সরকার বি়জ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করেছে, ডোমকল পুরসভা হবে। দীর্ঘদিনের দাবি, আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হওয়ায় উৎফুল্ল ডোমকলবাসী।
পুরসভা হিসেবে স্বীকৃতি মেলায় খুশি এলাকার আম-জনতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিমহল। বুধবার ডোমকল পুরসভা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিপত্র এসে পৌঁছেছে ডোমকলের মহকুমা শাসক পুস্পেন্দু মিত্রের দফতরে। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা হলে এলাকার উন্নয়ন অন্য মাত্রা পাবে। পঞ্চায়েত ক্রমবর্ধমান নাগারিক চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না। দ্রুত পুরসভা গঠনের কাজ শুরু করা হবে।’’ পুরসভা হওয়ার খবরে খুশি চাপা রাখতে পারছেন না এলাকার মানুষ। জেলার সব মহকুমা সদর পুরসভা হলেও ব্যতিক্রম ছিল ডোমকল। ফলে পঞ্চায়েতের অধীনে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠছিল মুর্শিদাবাদের সীমান্ত লাগোয়া এই জনপদ। নিকাশীনালার অস্তিত্ব সেভাবে চোখে পড়ে না। দুই-এক জায়গায় তৈরি হলেও তা বেহাল হয়ে পড়ে থাকে, স্রেফ রুটিন মাফিক নজরদারির অভাবে। রাস্তা-ঘাটে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। ডোমকলের লোকজন উপযুক্ত নাগরিক পরিষেবা না পেয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন। এখন তাঁদের আশা, পুরসভার মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন হবে ডোমকলের। এলাকার বাসিন্দা হামিদ খান বলেন, ‘‘অনেক চালু পরিষেবাও অচল হয়ে থাকে। নজরদারির অভাবে। আশা করি পুরসভা হওয়ার ফলে সে সব আর হবে না।’’
জনসংখ্যা বেশি হলে পুরসভা ‘এ’ পযার্য়ভুক্ত হয়। সে ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অনুদানও মেলে বেশি।
তাই আমরা কিছু গ্রাম্য এলাকাকেও পুরসভার মানচিত্রে রেখেছিলাম। ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি
ডোমকল পুরসভা হবে, এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। বর্তমান সরকার বিষয়টি অহেতুক বিলম্ব করল।
আনিসুর রহমান, প্রাক্তন মন্ত্রী।
বাস্তবিকই, রাজ্যের পুরসভাগুলি এলাকার উন্নয়নের জন্য নগরোন্নয়ন দফতরের কাছ থেকে ফি বছর মোটা টাকা পেয়ে থাকে। এছাড়াও কেন্দ্রের ‘আরবান রিন্যুয়াল মিশন’-এর টাকাও এলাকার পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য। ডোমকলবাসীর আশা, সেই অর্থে সেজে উঠবে এলাকা। পুরসভা হওয়ার খবরে খুশি জেলার রাজনৈতিক মহলও। ডোমকলের কংগ্রেস নেত্রী তথা লালবাগের বিধায়ক শাওনি সিংহরায় বলেন, ‘‘পুরসভা হলে এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ হবে। এবার অন্যান্য মহকুমা সদরের আদলে নতুন করে সাজবে আমাদের ডোমকলও।’’ জেলা তৃণমূলে সভাপতি মান্নান হোসেন নবগঠিত এই পুরসভা গঠনের ব্যাপারে নিজের কৃতিত্ব দাবি করে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। ডোমকলকে পুরসভা করার জন্য নিয়মিত পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি হাকিমের কাছে দরবার করেছি।’’
তবে, এর মধ্যেও শুরু হয়েছে তরজা। এলাকার লোকজনের দাবি, নবগঠিত এই পুর এলাকায় বেশ কিছু গ্রাম্য এলাকাকে ঢোকানো হয়েছে। ওই এলাকাগুলির অর্থ ব্যবস্থা একান্তভাবেই কৃষি নির্ভর। পুরসভার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত হলে ওই এলাকার মানুষের ঘাড়ে করের বোঝা চাপবে। ডোমকল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রেজিষ্টার বাইজিত হোসেন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতারা ভোটের কথা মাথায় রেখে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি গ্রামগুলিকে পুর এলাকায় নিয়ে এসেছেন। তা করতে গিয়ে বাস্তবকে ভুলে আমিনাবাদ, ঝাউবেড়িয়া, শম্ভুনগরের মত প্রত্যন্ত গ্রামকে পুরসভার আওতায় আনা হয়েছে। কৃষি প্রধান এই এলাকায় উন্নয়ন কি হবে জানি না! তবে কৃষকের ঘাড়ে বড় অঙ্কের করের বোঝা যে চাপবে সে বিষয়ে কোনও সন্দে নেই।’’
ডোমকলকে পুরসভা হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয় বাম আমলে। সেই সময় ডোমকলের বিধায়ক ছিলেন সিপিএমের আনিসুর রহমান। তিনি রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন। সেই সময়েই প্রস্তাবিত ডোমকল পুরসভার মানচিত্র তৈরি হয়। গ্রাম্য এলাকার অনুপ্রবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘জনসংখ্যা বেশি হলে পুরসভা ‘এ’ পযার্য়ভুক্ত হয়। সেক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অনুদানও মেলে বেশি। তাই আমরা কিছু গ্রাম্য এলাকাকেও পুরসভার মানচিত্রে রেখেছিলাম।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডোমকল পুরসভা হবে, এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। বর্তমান সরকার বিষয়টি অহেতুক বিলম্ব করল।’’ যদিও কৃষি প্রধান এলাকার অনেকেই পুরসভার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত হওয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। মানিকনগরের বাসিন্দা সামসুল আলম বলেন, ‘‘পুর পরিষেবা পেতে গেলে কিছু সমস্যাকে তো মেনে নিতেই হবে। মানিকনগরবাসী তার জন্য প্রস্তত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy