Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অনুব্রতকে নিয়ে অস্বস্তি তৃণমূলেই

কিছুক্ষণ সভা চলার পরেই ফিসফাস শুরু হয়ে যায় কর্মীদের মধ্যে । কেউ বলেন, “এটাই দরকার ছিল। ঘরে বসে লবি করে আর নেতা থাকা যাবে  না!”

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৯
Share: Save:

নদিয়ার সংগঠনকে চাঙ্গা করতে বীরভূম থেকে তাঁকে ডেকে এনেছেন দলনেত্রী। কিন্তু প্রথম কর্মিসভার পরে সেই অনুব্রত মণ্ডলের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলে।

প্রশ্নের কেন্দ্রে অনুব্রতের কথার ধরণ, ধমক-চমক, হেডমাস্টার-সুলভ চালচলন। যা দেখে নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, এই মডেল বীরভূমে চললেও এই জেলার সঙ্গে তা মানানসই নয়। নিচুতলায় অনেকে খুশি হলেও একটা অংশ অসন্তুষ্ট, কিছু কর্মী দ্বিধাগ্রস্তও।

গত সোমবারই বেতাইয়ে প্রথম কর্মিসভা করেছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত। মঞ্চে তাঁর সঙ্গে নদিয়া জেলার নেতারা ছিলেন। আর ছিলেন আগ্নেয়াস্ত্রধারী নিরাপত্তা রক্ষীরা। সেখানে বসেই সাংবাদিক সম্মেলন করে অনুব্রত বলেন, “এই জেলার কর্মীরা খুব ভাল। সমস্যা যেটা আছে, সেটা সাংগঠনিক।” যা শুনে অনেকের মনে হয়েছে, অনুব্রত আসলে ঘুরিয়ে জেলা নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। কিছু নেতাকে প্রকাশ্যে ধমকও দিয়েছেন তিনি।

কিছুক্ষণ সভা চলার পরেই ফিসফাস শুরু হয়ে যায় কর্মীদের মধ্যে। কেউ বলেন, “এটাই দরকার ছিল। ঘরে বসে লবি করে আর নেতা থাকা যাবে না!” কেউ আবার কটাক্ষ করেন, “এটা কর্মী বৈঠক হচ্ছে না খাপ পঞ্চায়েত?” কারও মনে ধন্দ, “এ ভাবে প্রকাশ্য নেতাদের ধমকালে কর্মীরা কি আর তাঁদের মানবেন?” ”
তেহট্ট মহকুমার এক বিধায়কের মতে, “উনি প্রথমেই যে ভাবে নিচুতলার কর্মীদের সামনে জেলা নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলে দিয়ে গেলেন, তার ফল আখেরে ভাল হবে না।” কারণ? বিধায়কের দাবি, “এতে কর্মীরা হতাশ হয়ে যেতে পারেন। তাঁরা মনে করতে পারেন, আমাদের জেলার নেতারা ব্যর্থ। এই নেতাদের সামনে রেখেই কিন্তু এতগুলো বছর সিপিএমের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কর্মীরা লড়াইটা চালিয়ে এসেছেন। সরকারে পালাবদল ঘটিয়েছেন।”

বিষয়টা মানতে পারছেন না অনেক কর্মীও। করিমপুর এলাকায় এক কর্মী বলছেন, “যদি সাংগঠনিক দুর্বলতা থেকেও থাকে, প্রকাশ্যে কর্মীদের সমনে নেতৃত্বের দিকে আঙুল না তুলে বন্ধ ঘরে বসে আলোচনা করলে পারতেন!” তা ছাড়া, অনেকের মতেই, বীরভূমের রাজনীতির ধরন নদিয়ার সঙ্গে ঠিক মেলে না। এই জেলাতেও ভোটে অশান্তি হয়, কিন্তু তার ধরনটা বীরভূমের মতো নয়। অনুব্রতর ‘পাঁচন’ এখানে কাজ না-ও করতে পারে।

‘বহিরাগত’ অনুব্রত জেলার হালচাল কতটা বুঝছেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। যেমন পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির কাছে কিছু আসন হারার ব্যাখ্যা চেয়ে অনুব্রত বুথ বা অঞ্চল সভাপতিদের কাছে জানতে চান, “কেন বিজেপি শক্তিশালী হবে? আপনারা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা বলছেন না?” সে প্রসঙ্গে এক ব্লক সভাপতির কথায়, “ওঁকে বুঝতে হবে, এটা বীরভূম নয়। এখানে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ও পার বাংলা থেকে আসা। সব হারানোর যন্ত্রণা এখনও তাঁদের করে খায়। স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দুত্ববাদী দল বা সংগঠনের প্রতি এঁদের একাংশের দুর্বলতা আছে। এটা দু’এক দিনে বোঝা সম্ভব নয়।”

তা ছাড়া অন্য জেলার সভাপতির ‘দাদাগিরি’ নদিয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-আন্দোলন চালিয়ে আসা বর্ষীয়ান নেতারা কতটা মেনে নিতে পারবেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এক বিধায়কের মতে, “এই জেলায় বিধায়ক ও সংগঠন মিলে-মিশে থাকে। কারণ এখন যাঁরা বিধায়ক, তাঁদের মধ্যে দু’এক জন ছাড়া সকলেই লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এলাকায় সংগঠন শক্তিশালী করে তবেই বিধায়ক হতে পেরেছেন। বীরভূমের মতো এখানে কাউকে ধরে এনে বিধায়ক করা হয়নি। তাই বিধায়কদের বাদ দিয়ে সংগঠন চালাতে গেলে দলের ক্ষতিই হবে।”

তবে এই জেলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে যে কড়া হাতে রাশ ধরা দরকার, তা-ও বলছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, জেলা নেতৃত্ব তো বটেই, জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনুব্রত যে চড়া মেজাজে খেলা শুরু করেছেন, তিনি তা চালিয়ে গেলে গোষ্ঠী কোন্দল অনেকটাই কমবে।

তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তও বলছেন, “অনুব্রতর আসাটা এই জেলার পক্ষে ফলপ্রসূ হবে। বুথ স্তর থেকে কর্মীদের অনুপ্রাণিত করাটা দরকার ছিল।” আপনারা সেটা করতে পারেননি? গৌরী বলেন, “অসুস্থতার কারণে আমায় দীর্ঘ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। তখনই কোথাও-কোথাও সংগঠনের মধ্যে ফাঁক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি আর অনুব্রত মিলে সেটা এ বার ঠিক করে নিতে পারব।”

ফলেন পরিচিয়তে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal TMC Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE