বাড়িতে ত্রিপর্ণা। নিজস্ব চিত্র।
সেই সরস্বতী পুজোর পরের দিনই কলকাতা চলে গিয়েছিলেন তিনি। তার পর কত ঝড়ঝাপটা বয়ে গিয়েছে মেয়েটার উপর দিয়ে। এত দিন পর ঘরে ফিরল ঘরের মেয়ে। মা-বাবার কাছে দিন কয়েকের ছুটি কাটিয়ে সোমবার ফিরে গেলেন ত্রিপর্ণা...।
জেএনইউ-এর ছাত্র কানহাইয়া কুমারের মুক্তির দাবিতে গর্জে উঠেছিলেন যাদবপুরের ছাত্রীটি। মশাল হাতে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিবাদ মিছিলে। টেলিভিশন-সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর মুখ। আর তার জেরে ফেসবুকে তাঁর নামে আসতে শুরু করে একের পর হুমকি। কখনও পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়, কখনও আবার ভয় দেখানো হয় শ্লীলতাহানির।
ভয় করেনি? ‘‘না। আমি ভয় পাইনি, এখনও ভয় পাচ্ছি না,’’ দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন ত্রিপর্ণা। কৃষ্ণনগরে নেমেও কি ভয় করছিল না, যদি ওরা এখানে এসে গণ্ডগোল পাকায়? টিভি-খবরের কাগজের দৌলতে এখন ত্রিপর্ণাকে অনেকেই চিনে গিয়েছে। এ বারেও তাঁর জবাব, ‘‘না।’’
ওই ঘটনার পর মা-বাবা অবশ্য কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে চলে যান মেয়ের কাছে যাদবপুরে। যদিও বরাবরই তাঁরা মেয়ের পাশে ছিলেন। কখনও পিছিয়ে আসতে বলেননি ত্রিপর্ণাকে। তবু কোথাও যেন মনের মধ্যে আতঙ্ক দানা বেঁধেছিল। ভয় করত, ওরা কিছু করবে নাতো মেয়েটার। সেই মেয়ে বাড়ি ফেরায় প্রাণ ফিরে পায় ঘূর্ণির সরকার বাড়ি। তা-ও আসার কথা ছিল শুক্রবার। কিন্তু হঠাৎই ফোনে জানিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি চলে আসে ত্রিপর্ণা। মেয়েকে আনতে স্টেশনে চলে যান গুরুপ্রসাদবাবু। সঙ্গে গিয়েছিলেন আশপাশের অনেকেও। পরে বাড়িতে ত্রিপর্ণার সঙ্গে দেখা করতে আসেন পাড়া-প্রতিবেশীরা।
মেয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তপতীদেবী। বিছানা ছেড়ে ফের উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানের আড্ডায় ফিরেছেন ত্রিপর্ণার বাবা গুরুপ্রসাদবাবু। রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়েছে বড় পিসি গীতাদেবীর। ছোট পিসি বিনতাদেবী আদরের ভাইঝির পুতুলের নতুন জামা তৈরিতে মন দিয়েছেন।
রবিবার আবার বাড়িতে ত্রিপর্ণার ঠাকুরদা-ঠাকুমার বাৎসরিক কাজ ছিল। বাড়ির কাজকর্মের এক ফাঁকে কৃষ্ণনগরের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ভোলেননি ত্রিপর্ণা। যাদবপুরের সহপাঠীদের সঙ্গেও নিয়মিত ফোন ও হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করেন।
সরকার বাড়ির সবাই নিরামিষাশী। ত্রিপর্ণাও। গত কয়েকটা দিন রান্নাঘর থেকে ভেসে এসেছে ত্রিপর্ণার প্রিয় সব খাবারের গন্ধ। মা কী খাওয়ালো? ‘‘পায়েস। মায়ের হাতের পায়েস খেতে আমি খুব ভালবাসি...,’’ বলে উঠলেন তরুণী। সব দেখেশুনে পড়শিরা বলছেন, ‘‘এই তো সেই চেনা ছন্দ সরকার বাড়িতে! মেয়েটা যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল...।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy