ফাইল চিত্র
আকাশের দিকে মুখ করে চেঁচাচ্ছে বছর চারেকের শিশু। মা দু’গালে চাপ দিয়ে ধরতেই দু'ফোঁটা মুখে ফেলে দিলেন স্বাস্থ্যকর্মী জেসমিনারা। তার পরেই চক বের করে পাশের দেওয়ালে লিখতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি।
ডোমকলের গোকুলচক এলাকার মা তানজিলা একেবারে খড়্গহস্ত— পোলিও দিয়েছেন ঠিক আছে, কিন্তু দেওয়ালে একটাও যেন আঁচড় না পড়ে। এনআরসির আতঙ্কে এ বার পোলিও কর্মীদের উপরেও এমন ফরমান জারি করছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে ওই আতঙ্ক ছড়িয়েছে ছোঁয়াচে রোগের মতো। ডোমকলের বিএমওএইচ মামুন রশিদ বলেছেন, ‘‘রবিবার পোলিও খাওয়ানোর দিন থেকে এই সমস্যাটা আমাদের নজরে এসেছে।’’
কেবল স্বাস্থ্যকর্মী নয়, কখনও এনজিও কর্মী কখনও আবার আইসিডিএস কর্মী এমনকি রান্নার গ্যাসের অফিস থেকে বাধ্যতামূলক নজরদারি করতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছে কর্মীদের। এনআরসির আতঙ্কে গ্রামের মানুষের মধ্যে যে কোনও বিষয় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেই গুজব ছড়াচ্ছে। খাতা কলম হাতে কেউ গিয়ে বাড়ির কোনও তথ্য জানতে চাইলেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন তাঁরা। এমনকি তাঁদের উপরে নানাভাবে চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। দিন কয়েক আগে এমন বেশ কিছু ঘটনায় নাজেহাল হতে হয়েছে ডোমকল থানার পুলিশকে। এক পুলিশ কর্তার দাবি, ‘‘কিছু দিন ধরে আইসিডিএস কর্মী, এনজিও কর্মীদের বাড়ি থেকে তুলে এনে অবস্থা সামাল দিতে হয়েছে আমাদের। আর তা করতে গিয়ে কালঘাম ছুটেছে।’’
ডোমকলের মধুরকুল এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী ভারতী হালদার বলছেন, ‘‘সোমবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোলিও খাওয়ানোর সময় মধুরকুল ঘুঘুপাড়া এলাকায় অনেকেই পোলিও খাওয়ালেও দেওয়ালের নাম লিখতে বাধা দিয়েছেন। হাউস ভিজিটের সময় ওই কাজটা আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছি। এত দিন কেউ টুঁ শব্দটিও করেননি, কিন্তু এখন নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, ফলে পোলিও খাওয়ালেও অনেক বাড়িতেই হাউজ ভিজিটের সেই সংখ্যা আর লেখা যাচ্ছে না।’’ একই অবস্থা হয়েছে ডোমকলের গোকুলচক এলাকাতেও, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোলিও খাওয়ানো গেলেও হাউস ভিজিট না লিখেই ফিরতে হয়েছে তাঁদের।
স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের মধ্যে এনআরসি নিয়ে অনেক গুজব ছড়াচ্ছে গ্রামেগঞ্জে। আর এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে বেশ কিছু জরুরি পরিষেবা। শিশুদের নিয়ে ছেলেখেলা করছে মানুষ, পোলিও খাওয়ানোর সময় যে হাউস ভিজিট করা হয় তার সঙ্গে এনআরসির কোনও সম্পর্ক নেই সেটা বোঝানো দায় হয়ে পড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy