Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেঁচে আছি বিশ্বাস হচ্ছে না, বলছেন ভোটকর্মীরা

তিন ভোট কর্মী, এক কনস্টেবল আরেক সিভিক ভলান্টিয়ার ব্যালট আঁকড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন। পাশ দিয়ে পিস্তল হাতে ঘুরে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা।

ময়নাগুড়িতে স্ট্রংরুমে পাহারা। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

ময়নাগুড়িতে স্ট্রংরুমে পাহারা। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০২:২৮
Share: Save:

জীবন বাঁচাতে কেউ ধানখেতে লুকিয়ে ছিলেন। তিন ভোট কর্মী, এক কনস্টেবল আরেক সিভিক ভলান্টিয়ার ব্যালট আঁকড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন। পাশ দিয়ে পিস্তল হাতে ঘুরে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা।

কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে ‘ব্যালট’ তুলে দেন বহিরাগতদের হাতে। সোমবার রাতে বাড়িব ফিরেও যেন আতঙ্কের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি কোচবিহারের ভোটকর্মীদের অনেকেই। নিজেকে চাপে রাখতে না পেরে অনেক ভোটকর্মীই ফেসবুকে নিজের ওয়ালেই লিখেছেন, “বেঁচে ফিরলাম।” যদিও তাঁদের অনেকেই পরে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।

সোমবার রাতেই দিনহাটার বাইপাস সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এক ভোটকর্মী, শুভ্রকুমার দে (৫৭) অসুস্থ হয়ে মারা যান। বিরোধীদের অভিযোগ, চোখের সামনে যা ঘটেছে তা তিনি সহ্য করে উঠতে পারেননি। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ভোটের ডিউটি করে বাড়ি ফিরে অনেক রাতে তিনি অসুস্থ হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোট কর্মীদের অনেকেই জানান, এবারের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড় ধরণের গণ্ডগোল যে হবে তার আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। তাই অনেকেরই ডিউটিতে যোগ দেওয়ার মন ছিল না। কোচবিহারের ২ নম্বর ব্লকের মরিচবাড়ির একটি বুথে চারজন ভোট কর্মীর সঙ্গে একজন রাইফেলধারী ভোট কর্মী এবং আরেকজন সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন।

ওই বুথের এক ভোটকর্মী জানান, রবিবার রাতে বুথে পৌঁছনোর পর থেকেই ব্যালট পেপার ও বাক্স নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল কয়েকজন বহিরাগত। ভোটকর্মীরা রাজি না হওয়ায় তাঁদের ভয় দেখানো হয়। সোমবার ভোট শুরু হতেই বুথের দখল নিয়ে নেয় বহিরাগতরা। কারা কোথায় ভোট দিচ্ছে বুথের ভিতরেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে কয়েকজন। সন্ধ্যার পরে ব্যালট বাক্স কেড়ে নিয়ে ওরা। ওই সময় পুলিশের একটি ভ্যান সেখানে পৌঁছলে বহিরাগতরা হকচকিয়ে আড়ালে চলে যায়। ওই সুযোগেই পুলিশের গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয় ভোটকর্মীদের। ওই কর্মী বলেন, “কিছুদূর যাওয়ার পরে একটি অন্ধকার মাঠে আমাদের নামিয়ে দেয় পুলিশ। আরও পুলিশ না হলে এগোনো সম্ভব না জানিয়ে দেয় তাঁরা। আমরা লুকিয়ে পড়ি। পাশ দিয়ে বাইক নিয়ে দুষ্কৃতীরা ঘুরে বেড়ায়। পরে আরও পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে।”

মাথাভাঙার নয়ারহাটের একটি বুথে ডিউটি পড়েছিল এক প্রাথমিক শিক্ষকের। তিনি জানান, ১০৪৮টি ভোট ছিল ওই বুথে। ভোট পর্বের এক ঘণ্টা পর থেকেই বুথের দখল নিয়ে নেয় বহিরাগতরা। ছাপ্পা দিতে দিতে ৮৪০ গিয়ে থােম। তিনি বলেন, “আমার পরিচিত কিছু লোক ছাপ্পা দেয়। প্রথমটায় আমাকে দেখে একটু আড়ষ্ট হয়ে ছিল। পরে বলল মাষ্টারমশাই কিছু করার নেই।”

দিনহাটার গীতালদহের একটি বুথে আবার বোমা ছুড়তে ছুড়তে দুষ্কৃতীরা ঢুকে ব্যালট লুঠ করে। ভয়ে পালিয়ে যান ভোট কর্মীরা। তাঁদেরই একজন বলেন, “এখনও বেঁচে আছি এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না।” রাতে কোচবিহারের ১ নম্বর ব্লকের পানিশালার এক ভোট কর্মী বলেন, “সারাদিন সব ঠিক ছিল। সন্ধ্যায় এক মুহূর্তে সব পাল্টে গেল। সবার হাতে অস্ত্র। ভাঙচুর শুরু হল। ব্যালট বাক্স কেড়ে নিল। আমরা পালিয়ে ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকলাম। পরে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে।” এক ভোট কর্মীর স্ত্রী বলেন, “চারদিকে গণ্ডগোল, মৃত্যু। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে বসেছিলাম। কখন স্বামী ফিরে আসবে সেই অপেক্ষায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2018 Panchayat Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE