Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

মাস্ক লুকনো লুঙ্গির কোঁচড়ে

বাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকাগুলির অবস্থা কী? সব বিধি মানা হচ্ছে?

নজরে: সকাল ১১ টা বেজে ৩৫ মিনিট। চম্পাসারি বাজার। ছবি: স্বরূপ সরকার

নজরে: সকাল ১১ টা বেজে ৩৫ মিনিট। চম্পাসারি বাজার। ছবি: স্বরূপ সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

যে শহরে রোজ ছড়াচ্ছে করোনা, মৃত্যু হচ্ছে এক-দু’দিন ছাড়াই, সেখানে বাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকাগুলির অবস্থা কী? সব বিধি মানা হচ্ছে? পুলিশ কি নজর রাখছে? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার

বেলা ১০ টা

কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বাজার

ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই এক একটি দোকানে টাঙানো পলিথিনের নীচে ভিড় করে বাজার করছেন বাসিন্দারা। কয়েক জন দোকানির মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতাদেরও অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। দূরত্ববিধির বালাই নেই। পুলিশ, প্রশাসনের নজরদারিও বিশেষ চোখে পড়েনি। অথচ দূরত্ববিধি বজায় রেখে কেনাবেচার জন্য ক্ষুদিরামপল্লি এবং বিধানমার্কেট আনাজ বাজারকে এখানে সরিয়ে আনা হয়েছে। বাজার লাগোয়া রাস্তায় গাড়ির ভিড়। মাঝেমধ্যেই মাস্ক ছাড়া রিকশাচালক, মোটরবাইক চালককে দেখা যাচ্ছে।

বেলা সাড়ে ১০টা

বিধান মার্কেট মাছ বাজার

দু’দিনে মাছের পসরার মাঝে সরু জায়গা দিয়ে ভিড়, ঠেলাঠেলি করে যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। মুখে মাস্ক নেই মাছ বিক্রেতাদের একাংশের। অনেকে মাস্ক থুতনির নীচে নামিয়ে রেখেছেন। এক দোকানি বলেন, কাজের সময় মাস্ক ব্যবহারে সমস্যা হয়। বৃষ্টির জন্য সকালের দিকে বিধান মার্কেটে ভিড় একটু কম বলেই ব্যবসায়ীরা জানান।

সকাল ১০টা ৫০

সুভাষপল্লি বাজার

সামাজিক দূরত্ব নেই। নজরদারির জন্য পুলিশ নেই। দোকানিদের মধ্যে মাস্ক না পরার প্রবণতা কম। তবে গত কয়েক দিনের হইচইয়ে কিছুটা সচেতন মাছ ও আনাজ বাজারের ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যবসায়ী মাস্ক ব্যবহার করেছেন। রোজ হাজার-দেড় হাজার মানুষের যাতায়াত বাজারে। তাই আশঙ্কাও বেশি।

বেলা ১১টা

খালপাড়া নয়াবাজার

উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। গাঁধী ময়দানের পাশে বসে রয়েছেন একাধিক ভ্যানরিকশা চালক। কয়েক জনের গলায় ঝুলছে মাক্স। কয়েক জনের কাঁধে গামছা থাকলেও মাস্কের বালাই নেই। খানিক দূরে রেলগেটের দিকে এবং আশেপাশের হোটেল, চায়ের দোকানে শ্রমিক, মুটে, গাড়ি চালক-খালাসিদের ভিড়। অদূরে টোটোর সারি। গুটখা, খৈনি খেয়ে ক্রমাগত থুতু ফেলা চলছে চর্তুদিকে। ব্যবসায়ীদের একাংশও দোকান, অফিসে মাস্কের ব্যবহার করছেন না বলে অভিযোগ।

বেলা ১১টা

রবীন্দ্রনগর-রথখোলা বাজার

মাছ বাজারে ঢোকার সরু রাস্তার মুখেই জড়ো করে রাখা সাইকেল, স্কুটি। বাজারের ঢোকা বের হওয়ার পথে তাতে বাধা পেয়েই অনেক বেশি ভিড় জমে যাচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীদের দু’জনের মুখে মাস্ক নেই বলে নজরে এল। রথখোলা মাঠের বাজারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সেখানে একটি দোকানে আনাজ বাছতে জমছে ভিড়। রোজ কম বেশি ১০০০ থেকে ১২০০ মানুষের যাতায়াত এই বাজারে। জীবাণুমুক্ত করার কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।

সকাল ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট। ঘোগোমালি বাজার। ছবি: বিনোদ দাস

বেলা ১১টা ১৫

ঘোঘোমালি বাজার

বাজারের সামনে পুলিশি পাহারা থাকে। কিন্তু তা-ও বেআইনি বাইক পার্কিং, ভিড় থাকছেই। আনাজ ও মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদকের রিপোর্ট বুধবারই পজ়িটিভ এসেছে। কিন্তু বাজারের ভিড় কমেনি। শুক্রবার থেকে বাজারটি সাত দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা। কারণ বাজারের পাশেই একটি বাড়ির ১২ জন কোয়রান্টিনে গিয়েছেন। স্থানীয়দের অনেকেই বাজারের ভিড়ে আসছেন। জীবাণুমুক্ত করার কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।

বেলা ১১টা ২৫

গুরুংবস্তি বাজার

অনেকেই মাস্ক ছাড়া বাজারে ঘুরছেন। ভিড় করে কেনাকাটা করছেন। দূরত্ব বজায় রাখতে কোনও দোকানই ব্যবস্থা নেয়নি। কোথায় খদ্দেরদের দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা নেই। তাতে বেশি খদ্দের এলে একে অপরের গায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। দোকানিরা বলছেন, এই ঘিঞ্জি বাজারে তা কি আদৌ কোনওভাবে সম্ভব?

বেলা সাড়ে ১১টা

পানিট্যাঙ্কি মোড

ট্রাফিক সিগন্যালে কাছাকাছি অটো, টোটো। তার মধ্যেই দেখা গেল, ভ্যান চালকের মুখে মাস্ক নেই। তার পর একে একে চোখে পড়ল, রিকশা চালক, পথচারী, টোটোর যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মীরা দেখছেন না।

সকাল ১১টা ৩৫

চম্পাসারি মোড় লাগোয়া বাজার

নিবেদিতা রোডে বাজারে একটি চায়ের দোকানে জটলা পাকিয়ে বসে অনেকে। চা খাচ্ছেন। রাস্তার উল্টোদিকে আনাজের দোকানের সারি। মাঝে ডিভাইডারের উপরেও আনাজ, ফল নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রাস্তার উপরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা চলছে। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। ক্রেতা, দোকানদারদের মধ্যে দূরত্ব বিধি নেই। লাগোয়া চম্পাসারি মোড়। সেখানেও আনাজের বাজারে ভিড়। রাস্তায় ভিড়। মোড়ের মুখে একদিকের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো।

বেলা ১২টা ১০

শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন মোড়

মোড় লাগোয়া বেসরকারি টিকিট কাউন্টারগুলির সামনে অনেকে আড্ডা দিচ্ছেন। কয়েক জনের মুখে মাস্ক নেই। কেউ রুমাল বেঁধেছেন, কেউ তা-ও নয়। তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে যাত্রী আনাগোনা। বসার জায়গায় ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে অনেকে। মুখে মাস্কও কয়েক জনের। পুলিশ থাকলেও উদাসীন। খাবার হোটেলগুলিতে ঘেঁষাঘেঁষি। স্যানিটাইজ়ারও নেই।

দুপুরে সাড়ে ১২টা

ঝংকার মোড় ও লাগোয়া বাজার

দুইপাশের ৪, ৬ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক করোনা আক্রান্ত। তার পরেও বাজারের ৯০ শত‌াংশ ব্যবসায়ীর মাস্ক নেই বা গলায় ঝুলছে। দুই পাশের বস্তির অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। শেষে পুলিশের আগমন। মোড় এলাকার ধরপাকড়, সতর্ক করা শুরু। বাজারের ব্যবসায়ীদের মুখে নিমেশে উঠল মাস্ক, যা লুকোনো ছিল প্যান্টের পকেটে বা লুঙ্গির কোঁচড়ে।

দেখলেন: কৌশিক চৌধুরী, সৌমিত্র কুণ্ডু, শান্তশ্রী মজুমদার, নীতেশ বর্মণ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE