Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তামাঙ্গ না মন, শুরু জোর তর্ক

এক জন বিনয় তামাঙ্গ, অন্য জন মন ঘিসিঙ্গ। দু’জনে প্রায় সমবয়সী। সুবাস ঘিসিঙ্গের পুত্র মনের অনুগামীদের দাবি, তাঁদের নেতাই সাম্প্রতিক অতীতের অশান্তির সময়ে প্রথম মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

দূরত্ব: তখনও মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করতে বেরোননি। অপেক্ষায় মন ও বিনয়। দার্জিলিঙের রাজভবনে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

দূরত্ব: তখনও মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করতে বেরোননি। অপেক্ষায় মন ও বিনয়। দার্জিলিঙের রাজভবনে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিশোর সাহা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

দু’জনেই আচমকা পাহাড়ের রাজনীতির শিরোনামে চলে এসেছেন। আগুন নিভিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়ায় দুজনেই সামিল। তাই দু’জনের মধ্যে কে কাকে কোন ব্যাপারে কতটা ছাপিয়ে যাচ্ছেন বা পিছিয়ে পড়ছেন, তা নিয়েই এখন দার্জিলিং সরগরম। মুখ্যমন্ত্রী কার উপরে বেশি ভরসা করেন, তা নিয়েও দুই শিবিরে তর্ক-বির্তকের অন্ত নেই।

এক জন বিনয় তামাঙ্গ, অন্য জন মন ঘিসিঙ্গ। দু’জনে প্রায় সমবয়সী। সুবাস ঘিসিঙ্গের পুত্র মনের অনুগামীদের দাবি, তাঁদের নেতাই সাম্প্রতিক অতীতের অশান্তির সময়ে প্রথম মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাতেই বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিনয় অনুগামীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, মংপুতে দলের আহ্বায়ক হয়েই তিনি ই-মেলে রাজ্যকে আলোচনায় বসার অনুরোধ করেন।

জিএনএলএফ শিবির দাবি করছে, একদা সুবাস ঘিসিঙ্গের নানা খামখেয়ালিপনার কারণে (কখনও বাঁদর পুজো বা রডোড্রেনডন ফুল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া) বিরক্ত হয়েছিল পাহাড়। কিন্তু হালে বিমল গুরুঙ্গদের লাগাতার বন্‌ধ, হিংসা, ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়ানো দেখে অতিষ্ট পাহাড় ঘিসিঙ্গের ‘ভাল কাজের’ দিকে চোখ ফেরাচ্ছে। তাঁদের আরও দাবি, মন একাই পাহাড়ে ঘোরেন। তাঁর নিরাপত্তারক্ষী লাগে না। সেখানে বিনয় বহু রক্ষী পরিবৃত হয়ে থাকেন। জিএনএলএফ নেতারাই জানাচ্ছেন, স্ত্রী-মেয়ের স্কুলে যাতায়াতের জন্যও নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে রাজ্যকে অনুরোধ করেছেন বিনয়।

বিনয় শিবিরের নেতারা মনের কোনও সমালোচনা করছেন না। তবে মোর্চা সূত্রের খবর, সম্প্রতি রোহিণীর রাস্তার নামকরণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন বিনয়ই। গত সোমবার সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় তিনি সুবাস ঘিসিঙ্গকে রাজনৈতিক গুরুও বলেন। অথচ, সেখানে বক্তৃতায় মন একবারের জন্যও বিনয় বা জিটিএ-কে কৃতজ্ঞতা জানাননি! উপরন্তু, পাহাড়ের উন্নয়নে বিনয় যখন দিনরাত অফিস করছেন, ছুটছেন, কলকাতা যাচ্ছেন, তখন হিল ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে মন ঘিসিঙ্গ কতটা কী করছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে— বলছে মোর্চা শিবির।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা

মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু দুজনকেই পাশাপাশি রেখে এগোনোর বার্তা দিয়েছেন। সাম্প্রতিক দার্জিলিং সফরে সব সময়ে দু’জনকে দু’পাশে নিয়ে চলেছেন। দু’জনেই যে তাঁর কাছে সমমর্যাদার, সেটাও বারে বারে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, সমমর্যাদা সম্পন্নদের মধ্যে কে প্রথম হবেন, তা নিয়ে পাহাড়বাসীর আলোচনায় তো রাশ টানা যাবে না।

এই প্রতিযোগিতা, আলোচনা, তর্কাতর্কি, চাপানউতর নিয়ে কী বলছেন দুই নেতা? বৃহস্পতিবার রাজভবনে বৈঠকের পরে গাড়ি বসে সব শুনে বিনয় মুচকি হাসলেন। একটা কথাও বললেন না। মন ঘিসিঙ্গ বললেন, ‘‘এটা তো ঠিক, পাহাড়ের আবেগ, দাবি গোটা দেশের সামনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমার বাবা। জুনে অশান্তি শুরুর পরে আমিই তো প্রথম চিঠি লিখে আলোচনার আর্জি জানিয়েছিলাম।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘তবে আমার কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE