প্রতীকী ছবি।
বাজারের সঙ্গে চাহিদা রেখে রং ও নকশায় ভোল পাল্টে দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির প্রাণ ফেরাতে চলেছে রাজ্য সরকার।
জেলার ধুঁকতে থাকা তাঁতশিল্পকে চাঙ্গা করে তুলতে গঙ্গারামপুরে হস্তচালিত হ্যান্ডলুম হাব গড়ার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে হ্যান্ডলুম দফতর জানিয়েছে।
জেলাশাসক সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘সম্প্রতি বুনিয়াদপুরের সরকারি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হাব তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। কেন্দ্রের হ্যান্ডলুম ও টেক্সটাইল বিভাগ থেকে হাব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।’’ গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র বলেন, ‘‘গঙ্গারামপুরের ঠ্যাঙাপাড়া এলাকায় এক একর জমির উপর হাব গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। তাঁতশিল্পীরা হাবে বসেই অত্যাধুনিক যন্ত্রের আধুনিক মানের শাড়ি তৈরি করতে পারবেন।’’
গঙ্গারামপুরের তাঁতের শাড়ির হৃত গৌরব ফেরানোর সরকারি উদ্যোগের খবরে খুশি এলাকার হস্তচালিত তাঁতশিল্পীরা। তবে তাঁরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ কাল সরকারি উদ্যোগ ও নজরদারির অভাবে এখানকার তাঁতশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৩ সালে গঙ্গারামপুরে টেক্সটাইল হাবের মতো বড় প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে কাজ আর এগোয়নি। এই হ্যান্ডলুম হাবের মাধ্যমে উপকৃত হবেন কয়েক হাজার তাঁতশিল্পী।
একদা পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) থেকে আগত শরণার্থীরা গঙ্গারামপুর ও আশপাশ এলাকায় হস্তচালিত তাঁতশিল্পের পত্তন করে রুজিরোজগারের নতুন দিশা খুলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাধারণের নাগালের মধ্যে সস্তার ‘জনতা’ ও ‘মালা’ শাড়ির পাশাপাশি বাহারি জরি নকশার দামী তাঁতের শাড়ির কদর কেবল জেলার হাটেই নয়, নদিয়া ও শান্তিপুরের বাজারেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সে সময় গঙ্গারামপুরে হস্তচালিত তাঁতের সঙ্গে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ যুক্ত ছিলেন। ক্রমশ উৎপাদিত তাঁত বস্ত্রের আধুনিকীকরণ ও বিক্রির উপযুক্ত বাজারের অভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে একের পর এক তাঁতের কারখানা এবং তাঁত সমবায় সমিতিগুলি। বাম আমলের ৩৫ বছরে গঙ্গারামপুরে ঘরে ঘরে চালু হস্তচালিত তাঁতের কারখানাগুলির অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে এই শিল্পের সঙ্গে এখন মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ নিজেদের যুক্ত রেখে কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বহু তাঁতশিল্পী কাজ হারিয়ে কেউ দিনমজুর, কেউ ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছেন। পুরপ্রধান প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘তাঁতশিল্পীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নতমানের শাড়ি তৈরির পাশাপাশি ওই হাবে উৎপাদিত শাড়ি বিক্রির জন্য বাজারের ব্যবস্থা করে ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy