Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শব্দের জোর মাপবে কোন যন্ত্র

বাজির আওয়াজ: কোনও ভাবেই ছাড়াবে না ৯০ ডেসিবেলের মাত্রা

পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে শব্দ দূষণ পরিমাপের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণবকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও দফতর জেলায় নেই।

কালীপুজো জোরাল শব্দের মধ্যে কাটবে

কালীপুজো জোরাল শব্দের মধ্যে কাটবে

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:০২
Share: Save:

তিন জেলাতেই যে হারে শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট জেলাবাসীর অভিযোগ, তাতে আজ, কালীপুজো জোরাল শব্দের মধ্যে কাটবে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এর মাত্রা ধরার মতো যন্ত্রও কোনও জেলা প্রশাসনের হাতেই নেই। তিন জেলার বেশিরভাগ জায়গায় নেই বায়ু দূষণ মাপার যন্ত্রও। যদিও গৌড়বঙ্গের তিন জেলা এবং মুর্শিদাবাদকে নিয়ে একটি পরিবেশ দফতর রয়েছে মালদহে। আসলে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে মালদহের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ কমিটির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, “আইন, নিয়ম সবই খাতায়কলমে। তাই প্রতি বছর নিয়ম করে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটে সর্বত্রই।” যদিও সব জেলাতেই সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা দাবি করেছেন, দূষণ মাপার পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।

মালদহ

মানিকচক থেকে বাজি কিনতে বিচিত্রা মার্কেটে হাজির একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া। মানিকচক থেকে শহরে বাজি কিনতে কেন? সে জানায়, “চকলেট বোম নিতে এসেছি। গ্রামের বাজারে চকলেট বোম তেমন পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও ৬০ টাকার বোম কিনতে হয় ৯০ টাকায়। তবে শহরে এখন কালো ক্যারিব্যাগে করে বোম দিচ্ছে।” বাজি বিক্রেতাদের দাবি, “শেষ বাজারে পুলিশের অভিযান তেমন হয় না। পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়াও হয়ে যায়।” যদিও বাজারগুলিতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, “শেষ বেলায় অভিযান আরও জোরদার করা হবে।”

বাজারে যেমন নিষিদ্ধ শব্দবাজি অবাধে বিক্রি হচ্ছে, তেমনই সেই শব্দবাজি ফাটলে কতটা শব্দ দূষণ হবে তা মাপার কোনও পরিকাঠামোও নেই। যদিও জেলায় পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। সেখানকার লোকজন যে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ কমিটির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র সাহার কথাতেই।

দক্ষিণ দিনাজপুর

কানে শুনে আর অভিযোগের ভিত্তিতে শব্দবাজির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ। কেন না বাজির শব্দের সহনক্ষমতা মাপার কোনও যন্ত্র নেই বালুরঘাটে, জানাচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের একাংশই। জেলা প্রশাসন ও পুরসভার কাছেও নেই শব্দ ও বায়ু দূষণ মাপার যন্ত্র। ফলে বায়ু দূষণ রোধে কার্যত পুলিশকে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই বলেই অভিযোগ।

শনিবার বালুরঘাটের বাজারে শব্দবাজি বিক্রির বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চলে। তবে কোনও শব্দবাজি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যা দেখে অভিযোগ, নিয়মরক্ষার খাতিরে অভিযান করেছে পুলিশ। এতে কাজের কাজ হওয়ার নয়।

পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে শব্দ দূষণ পরিমাপের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণবকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও দফতর জেলায় নেই। তবে প্রতিটি মাইক কিংবা সাউন্ডবক্সে যন্ত্র লাগানো বাধ্যতামূলক। পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।’’ শব্দবাজির শব্দ কানে শুনে পুলিশ কতটা কী করতে পারবে, নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা টেনে চকভৃগু এলাকার এক শিক্ষক বলেন, ‘‘গত বছর একটি কালীপুজোর দিন শব্দবাজির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়ে উল্টো ফল হয়। রাতে দল বেঁধে এসে ক্লাবের সদস্যরা বাড়ির সামনে দেদার চকলেট বোমা ফাটাতে থাকে।’’ এ বার অবশ্য ওই পরিস্থিতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর) ধীমান মিত্র। তিনি জানান, এমন কিছু হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।

উত্তর দিনাজপুর

জেলায় নিষিদ্ধ শব্দবাজির কারবার রুখতে পুলিশ এখনও পর্যন্ত একটানা অভিযান শুরু করেনি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে শনিবার বিকাল থেকেই রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটতে শুরু করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের পরিবেশপ্রেমী বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের গাফিলতির জেরে এ বছরও জেলার দশটি থানায় এলাকায় গোপনে নিষিদ্ধ শব্দবাজির কারবার চলছে। ফলে আজ, জেলা জুড়ে শব্দ ও বায়ূ দূষণ চরমে উঠবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় শব্দ দূষণ ও বায়ূ দূষণ মাপার কোনও পরিকাঠামো নেই। দীপাবলিতে শব্দ ও বায়ূ দূষণ রোখা সম্ভব হয় না। কেন জেলায় শব্দ ও বায়ূ দূষণ মাপার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, জেলায় শব্দ ও বায়ূ দূষণ মাপার মতো কোনও পরিকাঠামো প্রশাসনের নেই। এ বছর প্রয়োজনে মালদহ থেকে আধিকারিকেরা এসে শব্দ ও বায়ূ দূষণ মেপে আইনানুগ পদক্ষেপ নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Crackers Sound Polution Awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE