সুনসান সাইলাপুর। নিজস্ব চিত্র
সাইলাপুরের বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সাইলাপুরের ঘোষপাড়া-সহ সংলগ্ন এলাকায় একাধিক ‘বোমাবাজ’ ও কুখ্যাত দুষ্কৃতী কয়েক জনের ডেরা রয়েছে। কিন্তু, ওই গ্রামে এর আগে বোমা তৈরির কারবারের কোনও নজির নেই।
গ্রাম সূত্রেই খবর, কোথাও কোনও গোলমাল বাধাতে হলে এলাকার দুষ্কৃতীরা গ্রামেরই ও পারে থাকা ভাগীরথী নদী পেরিয়ে কালিয়াচক-১ ব্লকের মোজমপুর পঞ্চায়েতের গঙ্গা নারায়পুর থেকে তৈরি করা হাতবোমা নিয়ে আসত। তবে, কী এমন হল যে, হঠাৎ দুশোর বেশি ‘বল বোমা’ গ্রামেই তৈরি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল? মহদিপুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রের পার্কিংয়ের কর্তৃত্ব রাখার জন্য বিবদমান গোষ্ঠীকে সায়েস্তা করতেই কি এই ছক? নাকি, মহদিপুর ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভা নিয়ে দিন কয়েক আগে যে গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল, তার পাল্টা জবাব দিতেই এই ঘটনা?
ইংরেজবাজার ব্লকের মহদিপুর বাজার পার করে ভাগীরথীর উপর থাকা পাকা সেতু পেরোলেই সাইলাপুর। মঙ্গলবার দুপুরে ওই গ্রামেই বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু হয়। জখম চার।
তার পর থেকে সাইলাপুর পুরুষশূন্য। অভিযোগ, পাছে পুলিশ ওই বিস্ফোরণ কাণ্ডে গ্রেফতার করে, তাই পুরুষরা বাড়িছাড়া। কিন্তু, কেন বোমা তৈরির প্রয়োজন পড়ল, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, মহদিপুর বাণিজ্য কেন্দ্রে পার্কিংয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে এলাকার দুটি গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। একপক্ষ মহদিপুরের দুষ্কৃতীদের দিয়ে সেই কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করে ও অন্যপক্ষ সাইলাপুরের মাতব্বরদের দিয়ে সেই কাজটি করে। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ, তাঁদের অনেকের নামে-বেনামে একাধিক ট্রাকও রয়েছে। সেই ট্রাকগুলি রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গেই যুক্ত এবং সংগঠনভুক্ত।
এখন প্রশ্ন, সেই ট্রাক মালিকদের সংগঠনের সভার সঙ্গে কি বোমা বাঁধার সম্পর্ক রয়েছে? গত ১২ তারিখ রাতে ওই সংগঠনের একটি সভা ডাকা হয়েছিল। সেই সভায় দু’পক্ষই ছিল। কিন্তু একপক্ষ সেই সভা ডাকা বৈধ কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা হয়। একপক্ষ সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়েও যায়। তার পরই এক দল লোক হাঁসুয়া, বোমা নিয়ে সভাস্থল ঘিরে ফেলে। খবর পেয়ে স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ওই সভাকক্ষে যারা কার্যত ঘেরাওয়ের মুখে পড়েছিলেন, তাঁরা বেশির ভাগই সাইলাপুর এলাকার। পুলিশি ঘেরাটোপে সেখান থেকে বার হওয়ার পরেই হয়তো অশান্তির ছক কষা হয়, বলছেন কেউ কেউ। তবে পুলিশ আপাতত চুপ। কুলুপ এঁটেছে স্থানীয় ট্রাক মালিকদের সংগঠনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy