Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উদ্ধারে নেমে ওঁরাই নায়ক

বিষ্ণু, মতিলালেরা কেউ মজুর, কেউ মৎসজীবি, কেউ দোকান কর্মী। অরুণ আবার ফাঁসিদেওয়া স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সকলেই বললেন, ‘‘বাচ্চারা চোখের সামনে ডুবে যাবে এটা হয় না কি! তাই কিছু না ভেবে জলে নেমে পড়েছিলাম।’’

সাবাস: এঁদের তৎপরতায় রক্ষা পেল ১১টি কচি প্রাণ। নিজস্ব চিত্র

সাবাস: এঁদের তৎপরতায় রক্ষা পেল ১১টি কচি প্রাণ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ১৮:১৭
Share: Save:

শুক্রবার সকালের পর ওরা সবাই নায়ক। কখনও পুলিশ বা এসএসবি অফিসারেরা এসে নামধাম লিখে নিচ্ছেন। বাসিন্দারা এগিয়ে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। কেউ বা হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে চা-বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন। মাথায় জলও মুছে দিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সকালটা আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল ওদের।

সকাল তখন সাড়ে ৮টা। সাইকেল নিয়ে ব্যারেজ মোড়ে এসে দাঁডিয়েছিলেন বিষ্ণু। হঠাৎ ক্যানাল রোডের দিকে চোখ যেতেই দেখেন, লালরঙের ভ্যানের মতো কিছু একটা জলে পড়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে মাথায় আসে, আরে এ তো স্কুল গাড়ি! সাইকেল রাস্তায় ফেলে, ‘বাচ্চারা জলে পড়েছে’ বলে চিৎকার করে দৌড়তে থাকেন বিষ্ণু। তা দেখেই পাশের চায়ের দোকান থেকে বার হয়ে এসে ছুটতে থাকেন মতিলাল, প্রদীপ ছাড়াও সঞ্জয় কর্মকার, শ্যামল বর্মন এবং অরুণ সিংহরা। ক্যানালের ধারে যেতে দেখেন পুলকার ডুবে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েগুলি চিৎকার করছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছ’জন। দূরেই স্নান করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ব্যারেজের বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী রামপ্রসাদ কর্মকার। পাশেই ছিলেন দেবারু মহম্মদ। তাঁরাও জলে লাফ দেন।

ততক্ষণে চিৎকার চেঁচামেচিতে জনা ৫০ বাসিন্দা জড়ো হন। হাত ধরে টেনে দুই হাতে উঁচু করে সাঁতরে একে একে ১১ জনকে ক্যানেলের ধারে নিয়ে আসা হয়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বাসিন্দারা। ফাঁসিদেওয়া ওসি সঞ্জয় ঘোষ, ডিএসপি প্রবীর মণ্ডলেরা ছয়জনকে পুরস্কৃত করার জন্য এদিন সুপারিশ করেছেন। এসএসবি অফিসারেরাও তাঁদের পুরস্কার দেবে বলে জানিয়েছেন।

বিষ্ণু, মতিলালেরা কেউ মজুর, কেউ মৎসজীবি, কেউ দোকান কর্মী। অরুণ আবার ফাঁসিদেওয়া স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সকলেই বললেন, ‘‘বাচ্চারা চোখের সামনে ডুবে যাবে এটা হয় না কি! তাই কিছু না ভেবে জলে নেমে পড়েছিলাম।’’

ওই যুবকদের এসে জড়িয়ে ধরেন অভিভাবকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘ওরা না দেখলে যে কী হত! ভাবলেই গা শিউরে উঠেছে।’’ উদ্ধার হওয়া শিশুরা বাড়িতে গেলেও ভুলতে পারেনি কাকুদের। দেবজিৎ, অয়নদের কথায়, ‘‘জল খাচ্ছিলাম। ভয়ে কান্না পাচ্ছিল। কাকুরা এসে কোলে তুলে নেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pool Car Canal Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE