গঙ্গারামপুরে জয়ের পরে তৃণমূলের উচ্ছ্বাস। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরসভায় সিপিএমকে মুছেই দিল তৃণমূল। গত পুরভোটে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি ওয়ার্ড দখল করে বোর্ড গঠন করেছিল সিপিএম। ৬টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। আর এবার ১৮ টি ওয়ার্ডই গেল তৃণমূলের দখলে। ফল কী হবে তা আগাম আঁচ করে মঙ্গলবার গণনাকেন্দ্রের দিকেই যাননি সিপিএম নেতা কর্মীরা। শহরের হাইরোডে দলীয় কার্যালয়ে বসে সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরীর বলেন, ‘‘২৫ তারিখে(এপ্রিল) ভোট লুঠ হয়েছিল। এ দিন লুঠের সামগ্রী ঘরে তুলল তৃণমূল।’’
এ দিন গঙ্গারামপুর পুরভোটের ভোট গণনা বয়কট করেছিল সিপিএম। বিজেপির তরফে মাত্র চার জন পোলিং এজেন্ট এ দিন গণনাকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। বিজেপির জেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গঙ্গারামপুরবাসীর উপর তৃণমূলের ভরসা নেই। তাই ভোট লুঠ করে সব আসন দখল করতে হয়েছে। আসলে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে এঁরা সন্ত্রাসের পথে জয়লাভ করেছে বটে, কিন্তু মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন’’ তাঁর অভিযোগ, জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের নিজের পাড়া দুর্গাবাড়ি এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের ভাইকে জেতাতেও জনমতের মুখোমুখি হতে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। তাই বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করিয়ে বিপ্লববাবুকে তাঁর নিজের ভাই প্রশান্ত মিত্রকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে আনতে হয়েছে।
এদিন স্থানীয় বিডিও অফিসের গণনা কেন্দ্রে ৪৪টি বুথের ভোট গণনা সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তাতে দেখা যায় এক একটি ওয়ার্ডে ৯০০ থেকে ১৫০৯ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এটা ছাপ্পা ভোটের ফল বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অবশ্য বলেন, ‘‘বাম আমলে একসময় গঙ্গারামপুরে ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে আমরা ৬টিতে জিতেছিলাম। কিন্তু সেবার কারচুপি ও সন্ত্রাস করে সিপিএম আমাদের আরও দুটি ওয়ার্ডে হারিয়ে দিয়ে বোর্ড দখল করেছিল। এবার তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।’’ বিপ্লববাবু দাবি করেন, ছাপ্পা ভোট হলে এতটা ব্যবধান হয়না। গঙ্গারামপুরে সবগুলি ওয়ার্ডে বিরোধী প্রার্থীর থেকে তাঁদের প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান হাজারের উপরে। এটা তাঁদের প্রতি মানুষের পূর্ণ আস্থার প্রকাশ।
গঙ্গারামপুরের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড দুটি তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আগেই জিতে গিয়েছিল। ফলে ১৬ টি ওয়ার্ডে ভোট হয়। সকাল ১০টার মধ্যে সবগুলি আসনে বিপুল জয়ের খবরে তৃণমূল শিবিরে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। বিডিও অফিসে জেলাশাসক তাপস চৌধুরী, পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়াকেও উৎফুল্ল হয়ে হাসতে দেখা দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ তারা তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের সঙ্গে ঘরে বসে আড্ডাও দেন। পরে সবুজ আবীর মেখে বিজয় মিছিলে সামিল হন বিপ্লববাবু। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারও গাড়ি নিয়ে বিডিও অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
সিপিএম অফিসে তখন বসে জেলা নেতা মানবেশ চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ, অমিত সরকার এবং গৌতম গোস্বামী। মনমরা নেতৃত্বকে সান্ত্বনা দিতে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘পুরভোট নিয়ে এত ভাবার কিছু নেই। সামনে আরও বড় লড়াই অপেক্ষা করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy