রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম রায়
মহারাষ্ট্রের ছায়া কোচবিহারে। এমনকি, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আর পার্থপ্রতিম রায়ের সম্পর্কে বলিউডের ছায়াও দেখছেন অনেকে।
শিবসেনার প্রধান প্রয়াত বাল ঠাকরের রাজনৈতিক উত্তরসূরি বলে এক সময় তাঁর ভাইপো রাজ ঠাকরেই ভাবতেন মহারাষ্ট্রের রাজনীতিকেরা। কিন্তু বাল ঠাকরের ছেলে উদ্ধবের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজের সঙ্গে বাল ঠাকরের দূরত্ব তৈরি হয় বলে অনেকেই মনে করেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ক্ষেত্রেও ঘটনা অনেকটা সে সরকমই বলে দাবি করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কয়েক জন।
তাঁরা বলছেন, রবীন্দ্রনাথবাবুর ছেলে পঙ্কজ ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। পরে আমেরিকাতে চাকরি করতে চলে যান। সেখানেই থাকতেন। মাঝে মধ্যে কোচবিহারে আসতেন। কিন্তু রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা তেমন কিছু ছিল না। এই পর্বে রাজনীতিতে তাঁর তেমন আগ্রহও ছিল না বলে রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘনিষ্ঠরাই বলছেন। এই সময়ে রাজ্যে পরিবর্তন আসার পরে রবীন্দ্রনাথবাবু দ্রুত ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকেন। তাঁর উত্তরসূরি বলে তখন পার্থপ্রতিমবাবুকেই ভাবা হত। পার্থপ্রতিমবাবু রবীন্দ্রনাথবাবুকে ‘কাকা’ বলে ডাকতেন। কেউ কেউ মজা করে বলতেন, “কাকা তো ভাইপো ছাড়া কিছুই বোঝেন না।” ভাইপোও ছিলেন কাকা অন্তপ্রাণ।
ঘটনাচক্রে, পঙ্কজবাবু রাজনীতিতে আগ্রহ দেখাতে শুরু করার পরেই কাকা-ভাইপোর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। এমনকি, রবীন্দ্রনাথবাবু এমন মন্তব্যও করেছেন, আর ‘কাকা’ ডাক শুনতেই চান না।
রবীন্দ্রনাথবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, পার্থবাবু ‘কাকা’র সাহায্যেই সাংসদ হয়েছেন, কিন্তু তার মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব তৈরি করতে উদ্যোগী হন। বহু বিষয়ে তিনি দলের জেলা সভাপতিকে কিছু জানানোরও প্রয়োজন বোধ করতেন না বলে তাঁদের দাবি। অভিযোগ, সাংসদ কোটার টাকায় উন্নয়নের ব্যাপারেও তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা করতেন না।
ইতিমধ্যে পঙ্কজবাবু বাবার হাত ধরে প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি জেলা পরিষদের সদস্য।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, পঙ্কজবাবুর উত্থানের সময়ই ঘটনাচক্রে পার্থবাবুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর দূরত্ব তৈরি হয়। তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘পার্থপ্রতিমবাবু মন্ত্রী-পুত্রের বিরোধিতা করতে শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত জেলা রাজনীতিতে মন্ত্রীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গেই হাত মিলিয়ে চলতে শুরু করেন সাংসদ।’’
পার্থবাবুর অনুগামীদের অবশ্য দাবি, সংগঠন বা উন্নয়ন কোনও বিষয়েই তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে তিনি কোনও কাজ করতেন না। পার্থবাবু সাংসদ হওয়ার পর থেকে তাঁর একটি নিজস্ব পরিচিতি তৈরি হয় জেলায়। বহু মানুষ তাঁর বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। পরে তাঁকে যুব সংগঠনের জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, সংগঠনে পার্থবাবুর প্রবেশ মন্ত্রী মেনে নিতে পারেননি। পার্থপ্রতিমবাবুর ঘনিষ্ঠদের সরাসরি অভিযোগ, ছেলে রাজনীতি শুরু করার পরে পার্থবাবুকে কোণঠাসা করতে শুরু করেন মন্ত্রী। দলীয় কর্মসূচিতে তো বটেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হত না। এককথায় ‘গুরুত্বহীন’ করে রাখা হয়। তাতেই দূরত্ব বেড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্যে রাজি নন। তিনি বলেন, “কাকা ডাক শুনতে চাই না। কেন শুনতে চাই না তা আর এক দিন বলব।” কাকার এক অনুগামী অবশ্য বলেন, “মনে ব্যথা পেয়েই এমন মন্তব্য করেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু।”
তবে পার্থপ্রতিমবাবুর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি ছোট্ট একটি মন্তব্য করেছে—“কাকা কাকাই। আর বাবা বাবাই।” পঙ্কজবাবু আমেরিকাতে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy