Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে তর্ক তৃণমূলে

কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ নিয়ে শাসক দল তৃণমূলের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এক পক্ষ চান, জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদের স্ত্রী আমিনা আহমেদ চেয়ারম্যান হন। আবার আর এক পক্ষ সামনে এনেছেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন পুরপ্রধান বীরেন কুন্ডুর পুত্র শুভজিৎ কুন্ডুর নাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০২:২৫
Share: Save:

কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ নিয়ে শাসক দল তৃণমূলের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এক পক্ষ চান, জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদের স্ত্রী আমিনা আহমেদ চেয়ারম্যান হন। আবার আর এক পক্ষ সামনে এনেছেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন পুরপ্রধান বীরেন কুন্ডুর পুত্র শুভজিৎ কুন্ডুর নাম।

পাশাপাশি আরও কিছু নামও উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সির কাছেও জেলার একাধিক নেতা বিভিন্ন লোককে চেয়ারম্যান করার জন্য দরবার করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তাঁরা ওই নামের স্বপক্ষে একাধিক যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন। জেলাতেও একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে জেলা নেতারা নিজেদের নিজেদের প্রস্তাব করা নাম নিয়ে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছেন। কেউই অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব চেয়ারম্যান ঠিক করবেন। তা নিয়ে আমাদের কোনও মতামত নেই।” অনেকটা একই ভাবে দলের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ এবং বনমন্ত্রী তথা দলের আরেক জেলা নেতা বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব চেয়ারম্যান বেছে নেবেন। যাকে ওই পদে বসানো হবে তাকেই আমরা মেনে নেব।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা অবশ্য বলেন, “দুই তরফেই রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নাম পাঠানো হয়েছে। দল যাকে যোগ্য মনে করবেন তাঁকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হবে।”

দলীয় সূত্রের খবর, এবারের পুর নির্বাচনে কোচবিহার পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১০ টি আসন। বামফ্রন্ট পেয়েছে ৮ টি আসন এবং দু’জন নির্দল জিতেছেন। এক্ষেত্রে বোর্ড দখল করতে তৃণমূলের আরও একটি আসন দরকার। নির্দল হিসেবে যে দুই জন জয়ী হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। গোষ্ঠী রাজনীতিতে কাউন্সিলর পদে শাসক দলের টিকিট না পেয়ে ওই দুই জন নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁরা এখনও প্রকাশ্যে তৃণমূলকে সমর্থনের কথা ঘোষণা না করলেও শাসক দল সূত্রের খবর, ওই দুই জন শাসক দলের সঙ্গেই থাকবেন। ইতিমধ্যে তাঁদের একজন গৌতম বড়ুয়া বামপন্থীদের সমর্থন করবেন না বলে নাগরিক কনভেনশনের পরে জানিয়ে দিয়েছেন। দুই নির্দলকেই হিসেবে ধরে নিয়ে বোর্ড গঠনের দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল।

আমিনা আহমেদকে যে গোষ্ঠী চেয়ারপার্সন হিসেবে চাইছেন তাঁদের যুক্তি, তিনি এবং জলিল আহমেদ জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূলে আছেন। এ ছাড়াও বর্তমানে আমিনা আহমেদ পুরসভার বিদায়ী ভাইস চেয়ারপার্সন। দীর্ঘদিন ওই পদে থাকার ফলে তাঁর অভিজ্ঞতাও অন্যের থেকে অনেক বেশি। সংখ্যালঘু মহিলা হওয়ায় ভোটের ক্ষেত্রেও আমিনা আহমেদকে ব্যবহার করতে পারবে দল। শুধু পুরসভা এলাকায় নয় গোটা জেলাতেই ভোটের ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে বলে দাবি তোলা হচ্ছে। ওই গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, “চারদিক থেকেই মানুষ চাইছেন আমিনা আহমেদকে। শুধু সংখ্যালঘুরাই নন, সব মানুষ এক কথা বলছেন। দলীয় নেতৃত্বের কাছেও তা পৌঁছে গিয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।” আমিনা আহমেদ বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

আরেক গোষ্ঠীর তরফে শুভজিৎবাবুর নাম তুলে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার চেয়ারম্যান পদে থাকা বীরেনবাবুর ছেলে শুভজিৎ। সেই সূত্রে পুরসভার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ গভীর। কী করে পুরসভা সাফল্যের সঙ্গে চালাতে হয় তা বাবার হাত ধরে অনেকটাই তিনি শিখেছেন বলে দাবি। বীরেনবাবু এই পুরসভা নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখতেন। শুভজিৎ চেয়ারম্যান হলে সে স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে পারবেন। পাশাপাশি ওই গোষ্ঠীর তরফে আরও যুক্তি দেখানো হচ্ছে, কোচবিহারে শহরে সংখ্যালঘু ভোটের সংখ্যা কম। সে জন্য সংখ্যালঘুর বাইরে চেয়ারম্যান করা উচিত। শুভজিৎবাবুর মা রেবাদেবীও এবার কাউন্সিলর ভোটে জয়ী হয়েছেন। শুভজিৎ বয়সে নবীন হওয়ায় তাঁকে যদি রাজ্য নেতৃত্ব না মানেন সেক্ষেত্রে তাঁর মায়ের নামও তুলে ধরা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

এর পাশাপাশি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভূষণ সিংহের নামও তুলে ধরা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের তৃণমূলের জেলা স্তরের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি বহু বছর কাউন্সিলর থাকা ভূষণবাবুর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি বলে দাবি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্ব কাকে চেয়ারম্যানের পদে বসান সেদিকে তাকিয়ে সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE